আ’লীগের ২ গ্রুপের সংঘর্ষে আজিমপুর ‘রণক্ষেত্র’

0
ognikando

ognikando

রাজধানীর আজিমপুরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ওই এলাকা ‘রণক্ষেত্রে’ পরিণত হয়। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত সেখানে অচলাবস্থা বিরাজ করে। এ সময় বেশকিছু যানবাহনে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং ঢিল ছোড়াছুড়ির ঘটনায় আজিমপুর এলাকায় দুই ঘণ্টার বেশি সময় যান চলাচল বন্ধ থাকে। সংঘর্ষের ঘটনায় কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজিমপুর রোডের পার্ল হারবার কমিউনিটি সেন্টারে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদের অনুষ্ঠানস্থলের সামনে ময়লা ফেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। বৃহস্পতিবার সকালে ওই কমিউনিটি সেন্টারে কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ ও কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির আয়োজন করেছিলেন মুরাদ। ওই অনুষ্ঠানে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপুমনি এবং খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের থাকার কথা ছিল। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের সমর্থক হিসেবে পরিচিত মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফিকে ‘লাঞ্ছিত’ করার প্রতিবাদে তার অনুসারীরা একই সময়ে আজিমপুর রোডে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে এলাকাবাসী ঘুম থেকে ওঠে দেখেন, কমিউনিটি সেন্টারের সামনে ময়লার পাহাড় জমে আছে। মুরাদের সমর্থকরা সকালে সেখানে এসে ময়লার স্তূপ দেখে মেয়র সাঈদ খোকনের পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দিতে শুরু করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পুরো এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। কিন্তু বেলা ১১টার দিকে মেয়রপন্থী আওয়ামী লীগ কর্মীরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে আজিমপুর রোডে ঢুকতে চাইলে শুরু হয় গণ্ডগোল। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় পলাশীর মোড়ে দুই পক্ষের কয়েকটি মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেয়া হয়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে বেলা ১টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ওই এলাকার পরিস্থিতি ছিল থমথমে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আওয়ামী লীগের দুই নেতার সমর্থকদের মধ্যে মারামারি শুরু হয়। পুলিশ বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে শুরু হয় ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষ। এ সময় আজিমপুর এলাকা কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আজিমপুর চৌরাস্তা, পলাশী, ঢাকেশ্বরী মন্দিরসহ এতিমখানা রোডের পুরো এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আজিমপুর চৌরাস্তায় পুলিশ অবস্থান করলেও পার্ল হারবার কমিউনিটি সেন্টারের সামনে বেশ কিছু গাড়ি ভাংচুর করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে মেয়র সাঈদ খোকন এবং শাহে আলম মুরাদের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরেই দ্বন্দ্ব চলছে। ২৬ অক্টোবর মৌচাক-মগবাজার ফ্লাইওভারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মঞ্চে ওঠা নিয়ে দুই পক্ষের কর্মী-সমর্থকরা হাতাহাতিতে জড়ালে দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ্য রূপ পায়। এর জের ধরে ১ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বর্ধিত সভায় মুরাদের সমর্থকদের সঙ্গে মান্নাফির অনুসারীদের ফের হাতাহাতি হয়। এদিকে বৃহস্পতিবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা বিশৃঙ্খলা করেছে, তাদের গ্রেফতারে পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অপর এক অনুষ্ঠানে মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘কে বা কারা ওখানে ময়লা ফেলেছে, তা আমার জানা নেই। কেউ অভিযোগ করলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ আওয়ামী লীগ নেতা শাহে আলম মুরাদ বলেন, ‘আমরা সদস্য সংগ্রহ ও নবায়নের অনুষ্ঠান করছি। সেখানে কেন ডাস্টবিনের ময়লা দিয়ে আটকে দেয়া হল? তারপর আবার তারা কেন পুলিশের সঙ্গে মারামারি করল, এটা বুঝতে পারছি না।’ সাঈদ খোকনের সমর্থক হিসেবে পরিচিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিককে ইঙ্গিত করে মুরাদ বলেন, ‘ওখানকার এক কাউন্সিলরসহ কিছু লোক পুলিশের সঙ্গে মারামারি করেছে। এমনকি দীপুমনি আপার গাড়িতেও আঘাত করেছে।’ এ বিষয়ে হাসিবুর রহমান মানিক বলেন, ‘আমাদের কোনো লোকজন ওখানে মারামারি করতে যায়নি। আমাদের লোকজন আজিমপুর বাসস্ট্যান্ডে ছিল। দীপুমনির গাড়িতে যারা ঢিল ছুড়েছে এবং ভাংচুর ও পোড়ানোর কাজ করেছে, তারা উনাদের (মুরাদ) লোক। আমি ওয়ার্ড কাউন্সিলর, আমার লোকজন কেন মারামারিতে যাবে?’

মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফি বলেন, ‘ময়লার মালিক তো আর আমি নই। অনেক সময় গাড়ির সংকট থাকে, অনেক জায়গায় ময়লা জমে থাকে। হয়তো সরিয়ে নিয়ে যাবে। আসলে তারা বিরোধিতা করার জন্য বিরোধিতা করে।’ এর আগে হাতাহাতির দুটি ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে মান্নাফি বলেন, ‘তারা একজন মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করেছে। উনারা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা, আমিও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা। লাঞ্ছনার প্রতিবাদে আমরা কর্মসূচি দিতেই পারি।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ ইব্রাহীম খান বলেন, ‘আজিমপুরের ওই রোডে তাদের বিক্ষোভ সমাবেশের কোনো অনুমতি ছিল না। পুলিশ তাদের বাধা দিলে তারা ঢিল ছুড়তে শুরু করে। পরে পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *