তাবলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ওসমস্যায় সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না

তাবলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ওসমস্যায় সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। তাদের সমস্যা তাদেরকেই সুরাহা করতে হবে। তবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রাখতে পুলিশ যথাযথ ভূমিকা পালন করবে। কোনোভাবেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে দেয়া হবে না।তাবলীগ জামাতের দ্বন্দ্ব নিয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এসব কথা বলেন।
বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তাবলীগের এই অভ্যন্তরীণ সমস্যা তাদেরকেই সমাধান করতে হবে। আমরা এ ব্যাপারে ইন্টারফেয়ার করতে চাচ্ছি না। তাবলীগের আমীর, তাবলীগের যারাই আছেন, তারাই তাদের দ্বন্দ্ব সুরাহা করুক।’
কে গেল আর কে আসলো সেটা আমাদের দেখার বিষয় না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সবকিছু যেন সিকিউরড থাকে এটা আমরা নিশ্চিত করব। আমরা কোনও ডিসিশন চাপিয়ে দিতে চাই না, তবে রাস্তাঘাট যেন বন্ধ না করে ক্লিয়ার থাকে সেটা আমরা নিশ্চিত করব। কাকরাইল মসজিদে প্রচুর নিরাপত্তা ব্যাবস্থা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা কোথাও কোনো জায়গায় কোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা হতে দেব না। তাদের ভেতরের দ্বন্দ্ব তাদেরকেই ঠিক করতে হবে।
কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী তৈরি আছে বলে উল্লেখ করে তিনি। এরআগেবুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শাহজালালে পৌঁছান মাওলানা সাদ। তাকে স্বাগত জানানোর জন্য ঢাকার কাকরাইলের মুরুব্বি প্রকৌশলী সৈয়্দ ওয়াসিফুল ইসলামের নেতৃত্বে তবলিগ জামাতের আরেক অংশের সমর্থকরা অবস্থান করেন।
মাওলানা সাদ বিরোধীরা তাকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না ঘোষণা দিয়ে দুপুর ১২টা থেকেই বিমানবন্দর চত্বরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।
বিমানবন্দর থানার ওসি নূরে আযম সিদ্দিকী যুগান্তরকে জানান, মুসল্লিরা বিমানবন্দর চত্বরে অবস্থান নেয়ায় প্রধান সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা বলেন, এবারের ইজতেমায় মাওলানা সাদের অংশ নেয়ার বিষয়ে তারা আগে থেকেই বিরোধিতা করে আসছেন। এ মোতাবেক তাদের আশ্বাসও দেয়া হয়েছিল যে, মাওলানা সাদ এবার আসছেন না। কিন্তু বর্তমানে উল্টোটাই জানতে পেরেছেন। এ কারণে তারা রাস্তা অবরোধ করে রেখেছেন।
আন্দোলনকারীরা জানান, ইতিমধ্যে মাওলানা সাদ বিমানবন্দরের ভেতরে অবস্থান করছেন। কিন্তু তাকে বিমানবন্দরের ভেতর থেকে বাইরে আসতে দেয়া হবে না। তাকে ভারতে ফিরে যেতে হবে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তবলিগ একাংশের বিক্ষোভের ফলে রাজধানীর ব্যস্ততম ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়েছে। হোটেল রেডিসন থেকে উত্তরা হয়ে আবদুল্লাহপুর ছাড়িয়েছে এই যানজট।
উল্লেখ্য, মাওলানা সাদ ‘তবলিগ করা ছাড়া কেউ বেহেশতে যেতে পারবে না’ বলে বক্তব্য দেয়ায় তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসা।
সেখান থেকে মাওলানা সাদকে এ বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু তিনি উল্টো যুক্তি দেন। এ নিয়ে মাওলানা সাদের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
একপর্যায়ে দেওবন্দ মাদ্রাসার অনুসারী বাংলাদেশের আলেমরা তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তারা তাকে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমায় আসতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
তবলিগ জামাতের বাংলাদেশ শাখার ১১ শূরা সদস্যের মধ্যে ছয়জনই আলেমদের এ সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন।
গত ৬ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে আলেমরা সাক্ষাৎ করে মাওলানা সাদের ঢাকা সফরের ওপর নিষেধাজ্ঞার দাবি জানান।
এর পরদিন যাত্রাবাড়ীর জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়ায় মাওলানা সাদকে নিয়ে বৈঠকে বসেন তবলিগ জামাতের মুরুব্বি ও কওমি আলেমদের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটি। এতে বাংলাদেশ তবলিগের শূরা সদস্য ও উপদেষ্টারাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত ২১ জনের মধ্যে ১৩ জন ইজতেমায় মাওলানা সাদের উপস্থিত না থাকার পক্ষে মত দেন।