প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে “সাহিত্য পুরস্কার-২০১৭” গ্রহণ করলেন মোশতাক আহমেদ

এস কে দেব: বাংলা ভাষার অন্যতম কথাসাহিত্যিক ও নন্দিত লেখক মোশতাক আহমেদ। বৃহস্পতিবার (০১ ফেব্রুয়ারী ২০১৮) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট থেকে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার-২০১৭ গ্রহণ করেছেন । সাহিত্যের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী শাখায় তিনি এ পুরস্কার লাভ করেন। কর্মজীবনে তিনি একজন পুলিশ কর্মকর্তা। বর্তমানে তিনি ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপকমিশনার হিসেবে কর্মরত আছেন।
সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনে ২০১৭ সালের বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করেন একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। এ বছর সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখায় বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পাওয়া ১০ বিভাগে ১২ জন তন্মধ্যে বিশিষ্ট কবি, লেখক ও গবেষকের মধ্যে মোশতাক আহমেদ একজন।
শৈশব থেকেই মোশতাক আহমেদ প্রতিশ্রুতিশীল লেখক। মানুষের সফল রূপান্তর আর যান্ত্রিক সভ্যতার বিচিত্র বিবর্তনকে অগ্রাহ্য করে তারুণ্যের লেখক মোশতাক আহমেদ মেধা বিকাশে পরিচ্ছন্ন ভূমিকা পালন করছেন। কর্মজীবনে তিনি একজন পুলিশ কর্মকর্তা, যদিও সে পেশায় সময় একেবারেই নেই তারপরেও তিনি জনগনের সেবা দিয়েও বাড়তি সময়ে বই লিখে যাচ্ছেন অবিরত। প্রতিনিয়ত ব্যস্ততার মাঝে জীবনের সময়গুলোকে গভীর অনুভবের সঙ্গী করে নিয়েছেন মোশতাক আহমেদ। পাঠক, শুভানুধ্যায়ীদের ভালোবাসা, চিন্তাচেতনায় নিজের লেখনীতে সমৃদ্ধি এনেছেন মোশতাক আহমেদ। মানবিক মূল্যবোধের গভীরে অনুপ্রেরণার কথাসাহিত্যিক মোশতাক আহমেদের লেখার ভাষা চিত্রকল্পময়।
জন্ম: তিনি ১৯৭৫ সালের ৩০ ডিসেম্বরে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানাধীন সড়ইবাড়ী গ্রামে এক মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
শিক্ষাজীবন: মোশতাক আহমেদ ১৯৯২ সালে খুলনা বিএল কলেজ থেকে সম্মিলিত মেধা তালিকায় ১৩তম স্থান অর্জন করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করার পাশাপাশি ইংল্যান্ডের লেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন।
নিজের যথার্থ পরিচয় দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে শিক্ষাবিদ-গবেষক-সাহিত্যিক-লেখক মোশতাক আহমেদের। চিন্তাধারার নানাবিধ জটিলতাকে তিনি উন্মোচন করেন গভীর মমতায়। শিল্প, বাস্তবতাবোধ, চরিত্র, পরিবেশ, প্রতিবেশ বিষয় ও বক্তব্যের সঙ্গে মোশতাক আহমেদ তার ভাষার শরীরে নিজস্বতা আরোপ করতে সফল হয়েছেন।
তার প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা রতন, জোসনা রাতের জোনাকি, জকি, নিহির ভালোবাসা, অভিশপ্ত আত্মা, নক্ষত্রের রাজারবাগ, বসন্ত, বর্ষার দিগন্তে, জমিদারের গুপ্তধন ও মন ভাঙা পরী। আমাদের মাঝে শৈল্পিক কর্মের মাধ্যমে অনন্তকাল বেঁচে থাকবেন মোশতাক আহমেদ- এটাই আলোকিত বন্ধু ফোরামের প্রত্যাশা।
সাহিত্যকর্মঃ মোশতাক আহমেদের লেখালেখির শুরু ছাত্র জীবনে। তার প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস জকি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। জীবনধর্মী এই বইটি প্রকাশের পর তিনি ঝুকে পড়েন সায়েন্স ফিকশনের দিকে। রোবটিজম, ক্লিটি ভাইরাস, নিহির ভালোবাসা, লাল শৈবাল, ক্রিকি, পাইথিনের মতো দুর্দান্ত সায়েন্স ফিকশনগুলো তাকে সায়েন্স ফিকশনের জগতে শক্ত ভীত তৈরি করে দেয়। রিবিট নামের সায়েন্স ফিকশন সিরিজ কিশোরদের কাছে হয়ে উঠে দারুন জনপ্রিয়। রিবিটের জনপ্রিয়তার কারণে তিনি ছোটদের রিবিট নামে নতুন একটি সিরিজ লিখেন। একইভাবে পৃথিবীতে আগত ভিন গ্রহের বালক লো এর অভিযান নিয়ে রচিত লো সিরিজটি এখন রয়েছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। পাশাপাশি ভৌতিক উপন্যাসের ক্ষেত্রেও তিনি পাঠকের কাছে সমানভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করে চলেছেন।
সাহিত্যকর্মে অবদানের জন্য তিনি কালি ও কলম সাহিত্য পুরস্কার ২০১২, ছোটদের সেরা বই পুরস্কার ২০১৪, কৃষ্ণকলি সাহিত্য সম্মাননা ২০১৪, চ্যানেল আই সিটি আনন্দ আলো পুরস্কার ২০১৫ লাভ করেছেন।
বাংলাদেশ সায়েন্স ফিকশন সোসাইটি: মোশতাক আহমেদ বাংলাদেশ সায়েন্স ফিকশন সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা এবং সভাপতি। তিনি ২০১৫ সালে কয়েকজন উদ্যমী বিজ্ঞানপ্রেমীদের সাথে নিয়ে বাংলাদেশ সায়েন্স ফিকশন সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং বাংলাদেশে প্রথম কথা বলা হিউমানয়েড রোবট তৈরির উদ্যোগ নেই। রিবো নামের ঐ রোবট ২০১৬ সালে প্রথম সায়েন্স ফিকশন ফেস্টিভ্যাল প্রদর্শিত হয়। এরপর দ্বিতীয় দ্বিতীয় হিউমানয়েড রোবট ইবোও তৈরি হয় বাংলাদেশ সায়েন্স ফিকশন সোসাইটির তত্ত্বাবধানে। দেশব্যাপি বর্তমানে বাংলাদেশ সায়েন্স ফিকশন সোসাইটির সদস্য সংখ্যা ১২০০০।
ডকুমেন্টারি তৈরি: মহান স্বাধীনতা অর্জনে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী রাজারবাগ পুলিশ লাইনাস্ দখল করার চেষ্টা করলে রজারবাগের পুলিশ এবং পাকিস্তানী আর্মিদের মধ্যে যে যুদ্ধ হয়েছিল তার উপর তিনি মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ নামে একটি ডকুমেন্টারি তৈরি সম্পন্ন করেছেন। বাংলাদেশ পুলিশের তত্ত্বাবধানে নির্মিত ডকুমেন্টারিটি ২০১৩ সালের মার্চ মাসে মুক্তি পায়। উক্ত ডমুকেন্টারিটি মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের বীরোচিত ভূমিকার এক অনন্য দলিল হিসেবে স্বীকৃতি এবং প্রতিদিন পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে প্রদর্শিত হয়ে থাকে।
নাটক পরিচালনা: মোশতাক আহমেদ ২০১৭ সালে স্বরচিত মায়াবী জোছনার জীবন নামে প্রথম নাটক পরিচালনা করেন। নাটকটি চ্যানেল আই প্রচারিত হয়।
দেশ ভ্রমণ: মোশতাক আহমেদ তার কর্মজীবনে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইংল্যান্ড, হল্যান্ড, ডেনমার্ক, জার্মানী, অষ্ট্রিয়া, ইটালী, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, ভারত, সংযুক্ত আরব আমীরাত, লাইবেরিয়া, সিয়েরালিওন, মরক্কো, ঘানা, আইভরিকোস্ট, সুদান, মিশর, জাপান, অষ্ট্রেলিয়াসহ আরও অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন।
ফেইসবুকে তার দেয়া প্রতি্ক্রিয়ায় বলেন, এই পুরস্কার সাহিত্য রচনার প্রতি আমার দায়বদ্ধতা আরো বাড়িয়ে দিল। এই শুভক্ষনে আমি সকল পাঠক, প্রকাশক, পরিবারের সদস্য, আমার সহকর্মী, জুরি বোর্ডের সম্মানিত সদস্যসহ সকল শুভাকাঙ্খীর প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।