খালি চেকে এক কোটি ১৩ লাখ টাকার অঙ্ক বসিয়ে উকিল নোটিশ অত:পর

0
Ratan V

Ratan V

দিনবদল ডেক্স: অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থার চতুর্থ শ্রেণির তিন সরকারি কর্মচারীর কাঁধে এখন ঝুলছে এক মহাজনের ঋণ দাবির সোয়া কোটি টাকার বোঝা। মাত্র এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা দিয়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে দরিদ্র কর্মচারীদের জীবনের শেষ সম্বল পেনশনের টাকা হাতিয়ে নিতে এখন মরিয়া হয়ে ওঠেছে ওই প্রভাবশালী মহাজন।

এ ঘটনায় চরম উদ্বেগ- উৎকণ্ঠার মধ্যে জীবন কাটছে জেলার তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মশালচি রেখা বেগম, নৈশ প্রহরী সাবু নিয়োগী ও ঝাড়ুদার সুশীলা রাণী সূত্রধরের পরিবারের।

জানা গেছে, অভাবে পড়ে প্রায় দুই বছর আগে খালি চেক ও স্ট্যাম্পে সই দিয়ে তাড়াইল সদর বাজারের মহিউদ্দিন ওরফে রতন মহাজনের কাছ থেকে সুদের ওপর টাকা নেয় এ তিন সরকারি কর্মচারী। তাদের সই দেয়া ওই খালি চেক এবং স্ট্যাম্পে এখন এক কোটি ১৩ লাখ টাকার অঙ্ক বসিয়ে স্বেচ্ছায় পেনশনে গিয়ে অন্যান্য সহায়সম্পদ বিক্রি করে ওই বিপুল পরিমাণ টাকা পরিশোধের জন্য।

তিন হাজার টাকা মাসিক সুদে ৩০ হাজার টাকা নেয়া কুক মশালচি রেখা বেগম। তার নামে ৩৮ লাখ টাকা ও ৩৫ হাজার টাকা নেয়া নৈশ প্রহরী সাবু নিয়োগীর নামে ৩৬ লাখ টাকার চেক ডিজঅনার দেখিয়ে উকিল নোটিশ আসে। আর ১০ হাজার টাকা মাসিক সুদে এক লাখ টাকা নেয়া ঝাড়ুদার সুশীলা রাণীর বিরুদ্ধে ৩৯ লাখ টাকা দাবি করেছেন মহাজন। এতে ওই তিন পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

এ ঘটনায় সরকার-প্রশাসন সহযোগিতা না করলে এখন তাদের সামনে আত্মহত্যা ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই বলেও জানিয়েছেন ওই তিন অসহায় সরকারি কর্মচারী।

আমরা প্রকৃত ঋণের কয়েক গুণ বেশি সুদ দেয়ার পরও এ ঘটনা ঘটায় হতবাক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ সাবু নিয়োগী। তিনি জানান, তাকে ধরে নিয়ে কয়েক দিন আটকে রেখে পেনশনে গিয়ে এসব টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দেয় মহিউদ্দিন মহাজন। খবর শুনে তার স্ত্রী গিয়ে অনেক অনুনয় করে তাকে উদ্ধার করে আনেন।

রেখা বেগম ও সুশীলা রাণীও বললেন, তারা এখন তাদের জানমালের নিরাপত্তার অভাববোধ করছেন।

এ সময় তাড়াইলের আরও বেশ কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তির সঙ্গে কথা হলে তাদের কেউ বিষয়টকে “ওপেন সিক্রেট ” এবং কেউ “টক অব দ্য টাউন” হিসেবে জানালেন।

তাড়াইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো, আজিজুল হক ভূইয়া মোতাহার বিষয়টি সামাজিকভাবে নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।

জেলার আইন কর্মকর্তা পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) শাহ আজিজুল হক জানালেন, এ ধরনের অসহায় লোকজনের জন্য বিনা খরচে আইন সহায়তার সুযোগ রয়েছে।

আর এ টাকা দাবির পরিমাণকে অবিশ্বাস্য বলে বিপদগ্রস্ত দরিদ্র কর্মচারীদের রক্ষায় উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাস দিলেন কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান। বললেন, এ ধরনের কর্মচারীদের ওই বিপুল পরিমাণ টাকা কর্জ দেয়ার বিষয়টি কারও কাছে বিশ্বাসযোগ্য হওয়ার কথা নয়। আর কৌশল হিসেবে মামলার হুমকি দিয়ে তাদের নামে পাঠানো হচ্ছে উকিল নোটিশ।

মহাজন রতন ভূঁইয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি দাবি করেন, তিনি সুদে এসব টাকা দেননি। সুদের ব্যবসাও করেন না। হাসপাতালের এ তিন নিম্নআয়ের কর্মচারীদের সংসার চালানো ও জমি কেনার প্রয়োজনে এ বিপুল পরিমাণ টাকা তিনি দিয়েছিলেন। এখন টাকা পরিশোধ না করায় তিনি মামলার প্রস্তুতি হিসেবে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন।

এ সময় এ বিপুল পরিমাণ টাকার উৎস এবং কখন কোনদিন কোন ব্যাংক থেকে তাদের টাকা দেয়া হয়েছিল এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি মহিউদ্দিন মহাজন। এমনকি কথা হলে স্বীকার করেন তার আয়করেরও কোনো ফাইল নেই।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *