মাধবপুরে ভূমি অফিসকে ম্যানেজ করে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, দেখেও না দেখার ভান

স্টাফ রির্পোটার: মাধবপুর উপজেলার শাহজাহানপুরের ইউনিয়নের সীমনা ছড়া নামক নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী কিছু কতিপয় ব্যক্তি। বালু উত্তোলনের কারণে সীমনাছড়ার আশপাশের শত শত একর ফসলি জমি ভাঙনের হুমকির মুখে।
এদিকে ৬নং শাহজাহানপুর ইউপি চেয়ারম্যান তৌফিকুল আলম চৌধুরী গত ৩০/০৫/২০১৮ ইং তারিখে কৃষি জমির বালু অপসারনের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোকলেছুর রহমান বরাবর এক স্বারক লিপি প্রেরন করেন। স্বারক লিপিতে বর্নিত উপর্যুক্ত বিষয়ের আলোকে জানানো যাচ্ছে যে, গত কিছু দিন আগে (মে মাসের শেষের দিকে) একাধারে কয়েক দিন প্রবল বৃষ্টিতে পাহাড়ী ঢলের কারণে আমার ৬নং শাহজাহানপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ জায়গায় প্লাবিত হয়ে যায় এবং বিশেষ করে সিমনা নদীর অধিকাংশ জায়গায় পানির স্রােতে নদীর উভয় পাড়ে বিশাল বিশাল ভাংগনের কারণে প্লাবিত হয়ে ফসলি জমির উপর পলি এবং বালির স্তপ হয়ে যায় ফলে উক্ত এলাকার জমি কৃষি কাজ করার অনুপযোগী হয়ে যায়। তাই জরুরী ভিত্তিতে উল্লেখিত সমস্যা গুলো ও জমির বালি স্তুপ গুলো অপসারন করা প্রয়োজন। অুনলিপি ১। সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাধবপুর, হবিগঞ্জ। ২। উপজেলা কৃষি অফিসার মাধবপুর, হবিগঞ্জ।
ইউপি চেয়ারম্যানের স্বারক লিপির সূত্র ধরেই বালু নিলামের হিরিক পড়ে সিমনা নদীতে। এমনকি বালু নিলাম দরপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে ১লক্ষ ঘনফুট প্রাকৃতিক স্তুপাকারে পড়ে থাকা বালুর সর্বোচ্চ ডাকদাতা কারী হিসাবে নিলাম ডাকেন ৫ লাখ ২০ হাজার টাকায়। নিলামের একমাস আগেই কয়েক লক্ষ ঘনফুট বালু উত্তোলন করে পাচার করা হচ্ছে। বর্তমানে কাগজে-কলমে নির্ধারিত উল্লেখ করা থাকলেও নদীর অভিন্ন অংশ থেকে বালু উত্তোলনে হিরিক পড়েছে।
সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার বালু অবৈধভাবে উত্তোলন করছে বালু ব্যবসায়ীরা। উপজেলা প্রশাসনের আন্তরিকতার অভাবে সরকারি সিমনা নদীর বালু যেন বেদখলে। এতে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আবার মাঝে মধ্যে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে প্রশাসন নাম মাত্র মাঠে নামলেও তাদের দমানো যাচ্ছে না।
এদিকে উপজেলা প্রশাসনের কতিপয় কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মাধ্যমে এসব বালু প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি দ্বারা জব্দ করে পরে পুনরায় অবৈধভাবে গোপনে নিলাম দেওয়া হয়।
গত ১৪ জুন সীমনাছড়া থেকে উত্তোলনকৃত বালু নামমাত্র মুল্যে নিলামে দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মতিউর রহমান খানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সীমনা ছড়ার জব্দকৃত বালু তড়িঘড়ি করে নিলাম দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন মহল এ বিষয়টি জানেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, প্রভাবশালীরা এ বালু উত্তোলন ও ব্যবসায় জড়িত থাকায় ভুক্তভোগীরা প্রতিবাদ করতে সাহস পায়না।
এছাড়া ক্ষতিগস্তদের অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা ভুমি অফিসের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই চলছে সীমনাছড়া থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের উৎসব।
বালু উত্তোলনের ফলে সিমনা নদীর উপর দেবে যাওয়া ব্রিজটি মরণফাদে পরিনত। এসব দেখার কেউ নেই? তাছাড়া ভান্ডরোয়া -বনগাঁ -তেলিয়াপাড়ার গ্রামীণ চলাচলের কাঁচা রাস্তা দিয়ে ২০/২৫ টন বালু বোঝাই ট্রাক দিয়ে প্রতিনিয়ত রাস্তাঘাট নষ্ট করছে।
এ কারণে ভূমি অফিসের সংশ্লিষ্টরা ছড়ার বিভিন্ন অংশে বালু উত্তোলন দেখেও তারা না দেখার ভান করে থাকেন। অবৈধ বালু উত্তোলনের অভিযোগ করা হলেও ভূমি অফিসের এ নিয়ে কিছু করার নেই বলেও জানান এসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা।
সীমনাছড়ায় অবৈধ বালু উত্তোলনের ব্যাপারে মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোকলেছুর রহমান জানান, উত্তোলনকৃত বালু ও ফসলি জমির উপরে যে বালু গুলো ঝট বেধে আছে সেগুলো নিলামে দেওয়া হয়েছে ৫ লক্ষ ২০ হাজার টাকা । ফসলি জমির এক ইঞ্চি মাঠি নিতে পারবে না।
অথচ ২০১০ সালের বালুমহাল আইনে বলা আছে, বিপণনের উদ্দেশ্যে কোনো উন্মুক্ত স্থান, চা-বাগানের ছড়া বা নদীর তলদেশ থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। এছাড়া সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ। যদিও নদীর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ তবুও গোপনে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে বালু সিন্ডিকেটের সদস্যরা।
এদিকে উপজেলার উত্তর ও দক্ষিন অঞ্চলে যাতায়াতের এক মাত্র ভরসা সিমনা নদীর উপর বহুপুরাতন দেবে যাওয়া সেতু যেন অকালেই হারিয়ে যাচ্ছে। সিমনা সেতুটির মাঝ অংশে দেবে গিয়ে যানবাহন চলাচল ঝুকিপূর্ন হয়ে উঠছে। অথচ সেতুর গোড়া থেকেও বালু উত্তোলন করা হয়েছে। ফলে সেতুটি যে কোন সময় যানবাহনের বোঝা সইতে না পেরে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্খা রয়েছে।
গত ২১ জুন শুধু কৃষি জমির বালি অপসারনের জন্য নিলাম দেওয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের ১মাস আগ থেকেই সিমনা নদীর বিভিন্ন অংশ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে নামদারি বালু মহালদাররা। অথচ তাদের কাগজে কলমে নির্ধারিত কৃষি জমির বালু অপসারন করার কথা রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজেই বলেন কৃষি জমির স্তুপকৃত বালি অপসারনের জন্য এ নিলাম দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভূমি কর্মকর্তা মতিউর রহমান একই সুরে সুর মেলান ।
এদিকে উপজেলা ভূমি অফিসের বালু নিলাম পত্রে উল্লেখ করা হলো:
উপযুক্ত বিষয়ে উল্লেখ পুর্বক সুত্রোক্ত স্বারকে নির্দেশের প্রেক্ষিতে গঠিত কমিটি গত ১৪/০৬/২০১৮ খ্রি: তারিখে প্রকাশ্যে নিলামের মাধ্যমে মাধবপুর উপজেলার শাহজাহানপুর, সম্পদপুর ও ভান্ডারুয়া মৌজায় অবস্থিত সিমনা ছড়ার পাড় ভেংগে শাহজাহানপুর মৌজার প্রায় ২ একর, সম্পদপুর মৌজার প্রায় ৪ একর ও ভান্ডারুয়া মৌজার নীল মোহনের বাড়ীর পশ্চিমে প্রায় ১ একর ব্যক্তি মালিকানা কৃষি ভূমির উপর সরকারি প্রায় ১ লক্ষ ঘনফুট প্রাকৃতিক স্তুপাকারে পড়ে থাকা বালুর সর্বোচ্চ ডাকদাতা কারী হিসাবে নিলাম ডাকেন ৫ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ১-৪৬৩২-০০০১০২৬৮১ কোডে, ১৫% ভ্যাট বাবদ ৭৮ হাজার টাকা ১-১১৩৩-০০১৮-০৩১১ কোডে এবং ৫% আয়কর বাবদ ২৬হাজার টাকা ১-১১৪১-০০৭০-০১১১ কোডে সোনালী ব্যাংক মাধবপুর শাখায় ২০/০৬/২০১৮ খ্রি: তারিখে যত্রাক্রমে ১১, ১২ ও ১৩ নং চালানে পরিশোধ করার আপনাকে বর্নিত বালু নিম্নোক্ত শর্তে অপসারনের জন্য অনুমতি প্রদান করা হলো।
বালু উত্তোলনের শর্ত সমুহ:
১। পত্র প্রাপিÍর ৩মাসের মধ্যে সমস্ত বালু অপসারন করতে হবে। কোন অবস্থাতেই এই মেয়াদ বৃদ্ধি করা যাবে না।
২। ছড়া বা পাশ^বর্তী জমি হতে কোন বালু উত্তোলন করা যাবে না।
৩। কোন ড্রেজার বা বালু উত্তোলনকারী যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।
৪। রাস্তা, ব্রীজ, ছড়া ও কৃষি জমির ক্ষতি সাধন করা যাবে না।
৫। নির্ধারিত সময়ে অপসারন বা অন্য কোন কারনে নিলাম গ্রহীতা কোন প্রকার ক্ষতিগ্রস্থ হলে ক্ষতি পূলে দাবী করতে পারবে না।
৬। বর্নিত বালু অপসারনে কোন আইনগত জঠিলতা সৃষ্টি হলে বা নিলামের শর্ত ভংগ করলে নিলাম বাতিল বলে বিবেচিত হবে।
উপজেলা প্রশাসনের এসব শর্ত যেন কিছুতেই তোয়াক্কা করছে না বালু ব্যবসায়ীরা। সিমনা নদীতে তারা শক্তি প্রয়োগ করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে।
শুধু এই নয় মাধবপুরে সীমনা নদীর বালু ইজারার নামে অবৈধ বালু ব্যবসায়ী মাসুদ খান, অলিদ মিয়া ও আলফাজ মিয়ার নেতৃত্বে একটি কু-চক্রী মহল সক্রিয় হয়ে উঠছে। গত কয়েকদিন আগে জনৈক অলিদ মিয়া নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমরা জালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয় থেকে বালুর মহাল নিলামে নিয়ে এসেছি। তিনি বলেন ৬০ লাখ টাকা দিয়ে উপজেলার সোনাই নদী ও সীমনা ছড়া নিলাম নিয়েছেন। কেউ যদি আমাদের বিরুদ্ধে লেখালেখি করেন তহালে তথ্য প্রযুক্তি আইনে তাকে মামলা দেওয়া হবে।
এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা মোকলেছুর রাহমন ও উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা মতিউর রহমান বলেন তারা এ বিষয়ে জানেন না।
তাহলে কতটা বৈধতা আছে অবৈধ বালু ব্যাবসায়ীদের এটা জানেন না উপজেলা সরকারি কর্মকর্তারা। এই নিয়ে এলাকাবাসী কৃষি জমির ফসল রক্ষার্থে ভূমি মন্ত্রনালয়ের সু-দৃষ্টি কামনা করেন।
সূত্র:সময়ের সংবাদ অনলাইন পত্রিকা