ইমার্জেন্সি লাইন অন করো, রোগী আছে

0

ispat-1-20180

‘ইমার্জেন্সি লাইন অন করো। রোগী আছে।’ প্রাইভেটকারের ভেতরে উঁকি দিয়ে ৭/৮ বছরের এক অসুস্থ শিশুকে মায়ের কোলে শুয়ে থাকতে দেখে চিৎকার করে উঠলো লিকলিকে দেহের এক তরুণ।

রাজধানীর সোবহানবাগের রাস্তায় তখন প্রাইভেটকার, জিপগাড়ি, পিকআপভ্যান, মোটরসাইকেল ও রিকশার প্রচণ্ড যানজট লেগে আছে।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এ সময় গাড়ির ড্রাইভারের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আছে কি-না তা পরীক্ষা করে দেখছিল। ফলে রাস্তায় এতটুকু জায়গাও ফাঁকা নেই।

কিন্তু ইমার্জেন্সি লাইন অন বলার সঙ্গে সঙ্গে রূপকথার আলাউদ্দিনের চেরাগ ঘষার মতোই মুহূর্তেই রাস্তার এক পাশ ফাঁকা করে দিয়ে অসুস্থ শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে প্রাইভেটকারকে সুযোগ করে দেয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। তাদের একজন আবার ড্রাইভারের পাশের সিটের জানালায় বসে জরুরি রোগী আছে বলতে থাকে। রাস্তা ফাঁকা করে দেয় শিক্ষার্থীরা।

এ দৃশ্যপট আজ (শনিবার) দুপুর সাড়ে ১২টার। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে লালবাগের বাসিন্দা শিশুটির মা জাহানারা খাতুন বলেন, ‘নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা একেক জন ইস্পাত কঠিন মনোভাব নিয়ে বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে রেখেছে। ট্রাফিক আইন সঠিকভাবে মেনে কীভাবে চলতে হয়। গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হলে চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ কী কী কাগজ সঙ্গে নিয়ে বের হতে হয় তা শেখাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে তারা যতটা কঠিন, তেমনি রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স ও গাড়ির ক্ষেত্রে ততোটাই মানবিক। অন্যান্য সময় মৃত্যুপথযাত্রী রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স যানজটে আটক থেকে হর্ন বাজালেও কেউ তাদের হাসপাতালে যাওয়ার জন্য একটু জায়গা করে দেয় না। অথচ আজ শিক্ষার্থীরা মুহূর্তেই তার শিশু মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পৃথক লেন করে দিলো।’

জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক সরেজমিনে ঢাকা কলেজ, আজিমপুর, নিউমার্কেট, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, ধানমন্ডি, জিগাতলা, সোবহানবাগসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেছেন শুক্রবার বন্ধের দিনে শিক্ষার্থীরা রাজপথে না থাকলেও আজ (শনিবার) বিগত পাঁচদিনের তুলনায় অধিক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমেছে।

গত কয়েকদিন মেয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম থাকলেও আজ তাদের উপস্থিতি বেশি লক্ষ্য করা গেছে। তারা নিরাপদ সড়কের দাবিতে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’সহ বিভিন্ন ব্যানার পোস্টার নিয়ে স্লোগান দেয়।

রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিষ্ক্রিয় দর্শকের ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। বিক্ষোভাকারী শিক্ষার্থীরা যেসব গাড়ির কাগজপত্র ঠিক নেই অথবা চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স পায়নি সেসব গাড়িতে অমুছনীয় সাইনপেন দিয়ে ‘কাগজপত্র নেই’ অথবা ‘লাইসেন্স নেই’ লিখে দিচ্ছিল।

এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে গণপরিবহন না চলায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে বিঘ্ন হচ্ছে। কর্মস্থলে বা প্রয়োজনীয় কাজ সারতে মাইলের পর মাইল হেঁটে যেতে হচ্ছে।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *