করোনায় দক্ষিণ কোরিয়ার সাফল্যের রহস্য

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনা ভাইরাস চীনের পরে প্রথম দিকে যে কটা দেশের উপর ব্যাপকভাবে হানা দিয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম হলো দক্ষিণ কোরিয়া। তবে ইউরোপীয় দেশ সমূহ বা যুক্তরাষ্ট্রের মতো ভুল করেনি দক্ষিণ কোরিয়া। প্রথম থেকেই কড়া ভাবে মহামারি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নেই দেশটি।
জানা যায়, দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার সে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাবের একদম শুরুতেই এই পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে দেশটিতে এখন পরীক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা ৬ শর বেশি। এ ছাড়া ৮০টি ড্রাইভ-থ্রু সেন্টার আছে, স্বাস্থ্যকর্মীরা যেখান থেকে গাড়ি নিয়ে দ্রুত সন্দেহভাজন আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে পৌঁছে গিয়ে পরীক্ষা করে আসেন। এভাবে দক্ষিণ কোরিয়া এখন প্রতিদিন ২০ হাজার লোকের করোনা পরীক্ষা করতে সক্ষম। এ ছাড়া সন্দেহভাজন আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনা খরচে করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এব্যাপারে দক্ষিণ কোরিয়ার পিপলস হেলথ ইনস্টিটিউট সেন্টার অব হেলথ ইকুইটি রিসার্চের পরিচালক ও মহামারি বিশেষজ্ঞ মায়োং-হি কিম বলেন, প্রথম যে বিষয়টি এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে তা হলো করোনা মোকাবিলায় দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার ব্যাপক মাত্রায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা (অ্যাগ্রেসিভ টেস্টিং) এবং কন্টাক্ট ট্রেসিং বা সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। পাশাপাশি তারা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, শুধু টেস্টিং এবং ট্রেসিং দিয়ে ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো যায়নি। দেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিও ও ট্রেড ইউনিয়নসহ নাগরিক সমাজ নিবিড়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছে। তারা সরকারের দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহির দিকে নজর রেখেছে। ফলে সরকারের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে অবহেলার সুযোগ কম ছিল। অর্থাৎ, মহামারি মোকাবিলায় সরকারকে সক্রিয় করতে দক্ষিণ কোরিয়ার সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এছাড়া সরকার দ্রুত সরকারি প্রযুক্তি ও বেসরকারি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে গুণগতভাবে উচ্চ মানসম্পন্ন পরীক্ষা কিট উৎপাদন করেছে এবং সর্বোচ্চ দ্রুততার সঙ্গে ব্যাপকসংখ্যক মানুষের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো।