দুর্নীতির আতুড়ঘর এখন কানাডা
সাখাওয়াত হোসেন, টরোন্টে, কানাডা: কানাডা শীত প্রধান ইমিগ্রেশনের দেশ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে মাইগ্রেশন স্কিলড ওয়ার্কার, বিজনেস মাইগ্রেশন সিটিজেন নামক এক প্রকার প্রসেসের পয়েন্ট বন্টনের মাধ্যমে সে দেশের নাগরিক হন। বিজনেস মাইগ্রেশনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা সেদেশে বিনিয়োগ করতে হয়। সেটি কানাডা সরকার বৈধ্য না অবৈধ্য তা খতিয়ে দেখেন না। বিগত কয়েক বছর বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ অবৈধ টাকা লুটেরা বা ব্যাংকমানি বলে পরিচিত কানাডায় পাচার হয়েছে তা উল্লেখ্যযোগ্য। এবং এই পদ্ধতিটি এখন অধিক সহজতর হয়ে গেছে। এখন অনেকেই ব্যাংক লুট করে কানাডায় পাড়ি দিচ্ছে নাগরিকক্ত লাভের আশায়। কানাডার নাগরিকত্ব পান। কয়েক বছর থাকার পর পাসপোর্ট পান। বিভিন্ন দেশে ভ্রমনের ক্ষেত্রে ভিসা না লাগা এবং সে দেশের ভোটাধিকার প্রয়োগ ছাড়া আর কোন বিশেষ কোন কাজে লাগে না এই পাসপোর্ট । পাসপোর্ট বিক্রেতা দেশের মধ্যে কানাডা সবার উপরে। তারপরেও এখানে মানব পাচার, মাইগ্রেশন প্রতারণা, অবৈধ ব্যবসা, স্বাস্থ্য খাতে প্রতারণা, ব্যাংক প্রতারণা সহ নানা ধরনের অবৈধ লটারীর প্রতারণা ব্যবসা সহ দুর্নীতির আতুড়ঘর এখন কানাডা।
সেখানে একজন বাঙালী অভিবাসীকে নির্মম ভাবে উনিশ বছর ধরে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। নির্যাতনের কারণ তিনি জানেন না। নির্যাতনের কারনে তিনি এক সময় বাংলাদেশে চলে এসেছেন। সেখানেও তাকে নির্যাতন করা হচ্ছে। নির্যাতনের কারণে তার কোমড়ের হাড়, দাত , হাটু ভেঙ্গে গেছে।
সূত্র মতে, জানা যায় তার প্রাক্তণ স্ত্রী তার কেনা কানাডার লটারীর টিকেট চুরি করে লটারী কর্পোরেশনের অসাধু কর্মচারীদের মাধ্যমে তা ক্যাশ করেন। এই অবৈধ টাকা তিনি তার আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব এবং দুই দেশের রাজনীতিবিদ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনদেরকে দিয়ে তাকে নির্যাতন করেছেন বলে জানা যায়। সেখানে কেউ যায় ভাগ্যান্বেষণে কেউ যায় ব্যাংক লুট করে। ইদানিং ব্যাংক লুটেরা নিয়ে কানাডায় যে আন্দোলন হচ্ছে সে প্রসঙ্গে দু একটি কথা না বললেন নয়। আমি গ্রোসারী করে গণপরিবহনের জন্য নো ফিলসের (মুদি দোকান) হলুদ ব্যাগ নিয়ে পাবলিক বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। একজন অপরিচিত ভদ্রলোক আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন,
আপনি কোন দেশে থেকে এসেছেন?
আমি সাধারনত বলি না আমি কোন দেশের । কারণ এই অসভ্য বাঙালীরা দেশের বাহিরে যে ধরনের কাজ কর্মে লিপ্ত তাতে নিজেকে বাঙালী পরিচয় দিতে লজ¦াবোধ হয়। আমি বলি সৌদি অথবা ইন্ডিয়ান । আমার হাতে ভারী ব্যাগ বহন করতে কষ্ঠ হচ্ছে। সেখানে এ ধরনের ব্যাগ বহন করার কেউ নেই। আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, আমি বাঙালী। তিনিও হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি, তিনি একটি বিজনেস কার্ড আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন। অদুরে একটি উচু বিল্ডিং দেখিয়ে বললেন, আমি ঐ হোটেলের মালিক। আমি বেশ কয়েক মাস যাবত বাংলাদেশ থেকে এসেছি। বাঙালীদের ব্যাংক লুটেরার প্রতিবাদের খবর পাচ্ছিলাম। আমি বিজনেস কার্ডে তার নামটা দেখলাম। মনে মনে নিশ্চিত হলাম তিনিও একজন ব্যাংক লুটেরা। এ দেশে বিশ পচিশ বছর সৎ ভাবে থেকে যে আয় উপার্জন করেছি তাতে বৈধ্য ভাবে হোটেল কেনা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। কানাডার প্রায় মাইগ্রেশন কমিউনিটির প্রায় অধিকাংশ বাঙালী তার নিজস্ব বিষয়ে কাজ না পেয়ে রেষ্টুরেন্টের ওয়েটার ফ্যাক্টরীতে অড জব করে। যদিও পরিস্থিতি এখন কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। তিনি আমাকে ময়মনসিংহের ভাষায় বললেন, শুনেছি আপনি এখানে রাজনীতি করেন এবার লিবারেল না কনজারভেটিভ পার্টি ইলেকশনে সংখ্যাগরিষ্ট পাবে।
ভাই আমি জানি না!
ধারণা কি করতে পারেন?
না, ভাই । আমি খুব অসহায়বোধ করলাম।
ভদ্রলোকের সাথে খর্বাকৃত একজন মহিলা ছিলেন। তিনি বললেন, এইলা এইলা তো আমরাই বানাই। টাকা থাকলেতো এদেশে রাজনীতি করা কোন ব্যাপার না। আমি মিলিয়ন ডলার দিয়ে হোটেল কিনেছি । আমার কাছে প্রতিদিন অফার আসে রাজনীতি করার। আমরা বাঙালীরাই তো কানাডা কন্ট্রোল করি। আমাকে শুধু বলা হয়েছে নাম পরিবর্তন করে ইংরেজী নাম ব্যাবহার করতে । বলা হয়েছে যে, এ ব্যাপারে ভারতীয় চলচ্চিত্রের লোকজন আমাকে সাহায্য করবে।
এ ধরনের অর্থ লুট করে যারা এখানে উচ্চবিলাসী জীবন যাপন করছেন। দু দেশের আইনে এ ধরনের অবৈধ অর্থ কানাডায় নেওয়া সম্ভব নয়। এ ধরনের অবৈধ অর্থ কমিউনিটির অর্থনৈতির ভারসাম্য হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কানাডার সরকার মনে করছেন ইমিগ্রেন্টরা কোটি কোটি টাকা নিয়ে কানাডায় মাইগ্রেন্ট হলেই বোধ হয় কানাডার অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। সেখানে আইন সবার জন্য এক নয়। এবং সেই টাকায় বেগমপাড়ায় তাদের সন্তান, স্ত্রীরা উচ্চ বিলাসী জীবন যাপন করছে। তাদের স্বামীরা তাদের এসে মাঝে মধ্যে দেখা করে যায়। রাজনীতির পট পরিবর্তন হলে যাতে তাদের ‘‘সেইভ হ্যাভেন’’ এখানেই হয়। লুটেরা বিরোধী আন্দোলনকারী এক আট বছরের স্কুল ছাত্রকে যে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, তুমি এই তীব্র শীতের মধ্যে এখানে এসেছো কেন? সে জানালো আমি চোরদের ব্যাংক লুটেরার ছেলেদের সাথে পড়তে রাজী না।
বাস আসতে দেরী হচ্ছে । বন্ধের দিন টিটিসির সাধারণত বাসের স্লো সিডিউল থাকে। আমার মনে হচ্ছে আমি একটি দেশে জন্মগ্রহণ করেছি। যা আমি বলতে পারি না। আত্মগ্লানি অসহায় বোধ আমাদের খুব পীড়ত করে ফেলেছে। আমি আকাশের দিকে তাকালাম । সেখানে অন্ধকারাছন্ন টরোন্টোর আকাশ। প্রচন্ড শীতের মধ্যে টরেন্টোর আকাশ ঝলমলে থাকে। হয়তো একটু পরে বৃষ্টি হবে। আমি খুব মন খারাপ করে বাসের জন্য অপেক্ষা না করে হাটতে থাকলাম। আমার মনে হলো এ ধরনের ব্যাংক লুটেরার সামনে বেশীক্ষণ থাকা ঠিক নয়। আমার এ ধরনের মন খারাপ প্রায়শই হয়। দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য । ফেলে আসা বন্ধুবান্ধব আত্মীয় স্বজনের জন্য। আমরা যারা প্রবাসী তাদের সবারই বুকের ভিতরে একটা স্বদেশ থাকে। আমার বাংলাদেশ।