গত ৬ বছরেও নিস্পত্তি হয়নি খিলগাঁও সায়মন হত্যা মামলা!

তপন হায়দার :
২০১৪ সালে খিলগাঁও এলাকায় ৩৮ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় নিহত হন শরীফ হোসেন সায়মন ও গুরুতর আহন হন ইসরাফিল হোসেন। এ ঘটনায় খিলগাঁও থানায় একটি মামলা হয় । মামলা নং-১০৭-০৫/০৯/২০১৪ইং। এ ঘটনায় ডিবি ও খিলাগাঁও থানা পুলিশ বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে এক ডজনের মতো আসামী গ্রেফতার করলেও ছিনতাইয়ের প্রকৃত ঘটনা এখন পর্যন্ত রহস্যের বেড়াজালে। খিলগাঁও থানা পুলিশ কাজী মো: সিরাজুল ইসলাম, মো: শাহিন, মো: গোলাম মোস্তফা শাহিন ওরফে পুলিশ শাহিন নামে আদালতে একটি চার্জশীট প্রদান করেন। এ চার্জশিটটি যথাযথ হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে অনেকের। উক্ত চার্জশীটের ১নং
আসামী কাজী মো: সিরাজুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি জানান, ‘‘আমার পরিচিত বন্ধু কামরুজ্জামান টিপু আমাকে বলেন তোকে ডিডি অফিসে যেতে হবে, ডিবি তদন্তের স্বার্থে তোর সাথে কথা বলবে। আমি সরল মনে রাতে এসি আসাদুজ্জামান ও এডিসি আব্দুল আল মামুনের সাথে কাকরাইল হতে একটি প্রাইভেটকার যোগে ডিবি অফিসে যাই। ডিবি পুলিশ বিভিন্নভাবে উক্ত ঘটনার সাথে আমি জড়িত আছি কিনা জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং আমার মোবাইল যাচাই বাছাই করেন। এ মামলার সাথে সম্পৃক্ততা না পেয়ে আমাকে বলে আপনার পরিচিত মো: শাহীনকে ফোন করে ডেকে আনেন তারপর আপনাকে ছেড়ে দেবো। কিšুÍ আমি বারবার শাহিনের ফোনে ফোন করে না পেয়ে অফিসারদের বলি শাহিনের ফোন বন্ধ তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। ইতিমধ্যে গভীর রাত হয়ে যাওয়ায় অফিসাররা বলেন আপনাকে এখানে থাকতে হবে কাল শাহীনকে আপনি এনে দেন তারপর আপনি ছাড়া পাবেন। কথা মোতাবেক পররদিন সকালে শাহিনের পরিবারকে ফোনে বলি আপনার দ্রæত শাহীনকে একটু আমার মোবাইলে ফোন করতে বলেন। কিছুক্ষণ পর শাহিন আমার মোবাইলে ফোন করে জানায় নারায়ণগঞ্জ সাইনবোর্ডে আছি। তারপর ডিবি পুলিশ ও আমি সহ সাইনবোর্ডে যাই ও ডিবি পুলিশ শাহিন কে গ্রেফতার করে। শাহিনসহ আমরা পুনরায় ডিবি অফিসে আসার পর ডিবি পুলিশ আমাকে ছেড়ে দেন। আমি মুুক্ত হয়ে ডিবি অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে মোবাইলে শাহিনের আত্মীয় স্বজনরা না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করছিলাম। ইতিমধ্যে এসি আসাদুজ্জামানের টিমের সদস্য এএসআই মোতাহার তার ফোনে টাকা নেই, তাই আমার ফোন দিয়ে কথা বলার জন্য আমার মোবাইলটা নিয়ে ডিবি অফিসের ভেতরে চলে যায় এবং এক-দেড়ঘন্টা পর ফিরে এসে বলে ভাই আপনাকে স্যার ডেকেছে আবারও একটু ভেতরে যেতে হবে। আমি কথামতো ভেতেরে গেলে আমার মোবাইল ফোনে তিনটি আগ্নেয়াস্ত এর ছবি দেখিয়ে বলেন এগুলো কোথায় পেলেন? আমি বোঝানোর চেষ্টা করি যে, ছবিগুলো প্রকৃতপক্ষে আমার মোবাইলে ছিল না কিন্তু তারা কোন কথা না শুনে আমাকে মারধর শুরু করে। এবং বলে ২০ লক্ষ টাকা দিলে তোকে ছেড়ে দিবো। আমি বাধ্য হয়ে পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে আমার ডেবিট কার্ডের পিন নাম্বার বলি, ব্র্যাক ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট নম্বর ১৫১২২০২৩৫১৬৪৪০০১ হতে এক লক্ষ টকা সিটি ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট নং – ২৮০১৩৩৯৯০৬০০১ হতে এক লক্ষ টাকা এবং আমার ব্যবসায়ীক পার্টনার সাইমনের নিকট হতে দুই লক্ষ সহ সর্বসাকুল্যে চার লক্ষ টাকা জোগাড় করে বলি, আমার পক্ষে কোন ভাবে আর টাকা জোগাড় করা সম্ভব না। তখন ডিবি পুলিশ আমাকে ছেড়ে দেওয়ার শর্তে টাকা নিতে আমাদের বাসায় আসলে টাকা বুঝে নেবার পর আমার বাবাকে বলেন আপনার ছেলে এখনই রিয়েল এ্যারেস্ট হলো। এ কথা শুনে আমার পিতা ব্রেইন স্ট্রোক করেন এবং পরবর্তীতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান’’।
কাজী সিরাজুল ইসলাম আরো বলেন, ‘‘৩৮ লাখ টাকা ছিনতাই ঘটনার আগে থেকেই আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা ছিল এবং আমার একাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করে জব্দ তালিকা করেছেন ডিবি পুলিশ’’।
এছাড়া ১নং সাক্ষী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের সাথে কথা বললে তিনি জানান ‘‘আমাকে ঘুম থেকে ডেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে আমাকে সাক্ষী বানিয়েছে, আমি ঘটনার কিছু জানিনা’’
২নং সাক্ষী মো: শামসুল হক জানান ‘‘আমি পাশের বাড়ির সিউিরিটি গার্ড। কাজী সিরাজুল ইসলাম প্রকৃতপক্ষে একজন ভালো মানুষ। এ ধরনের ছিনতাই এরসাথে জড়িত থাকার কোন প্রশ্নই আসে না। কোন কিছুর অভাব নেই তাদের, ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে তাদের পরিবারের সম্মানহানি করার উদ্দেশ্যে তাকে এই মামলায় ফাঁসানো হয়েছে’’।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে ০৪/০৯/২০১৪ ইং তারিখে। অথচ, মাহবুব রশিদ মোল্লা পরাগের নিকট হতে ৬ লক্ষ টাকা জব্দ করা হয় ঘটনার ২ মাস ১২ দিন পর। কিন্তু, পরাগ সায়মনের আত্মীয় হওয়ায় উক্ত মামলায় পরাগকে কোনরূপ আসামি বা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। মামলার এজাহারে উল্লেখ রয়েছে একটি লেদারের ব্যাগে ৩০ লক্ষ টাকা এবং পলিথিনের ব্যাগে ৮ লক্ষ টাকা ছিল। এছাড়া ঘটনার সময় ছিনতাই কারীরা দুটি ব্যাগই ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ফলে এলাকাবাসীর প্রশ্ন পরাগ ছিনতাইয়ের সাথে জড়ি না থাকলে ৬ লক্ষ টাকা পেলো কোথায়।
খিলগাঁওবাসী আরো মনের করেন পরাগকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে উদঘাটন হতে পারে সায়মন হত্যা মামলার আসল রহস্য।
এদিকে সাইমন হত্যা মামলার সর্বশেষ বাদী ইফফাত হোসেন ইলোরার মুঠোফোনে তার বক্তব্য নিতে চাইলে তিনি কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
পিবিআই ঢাকা মহানগরের এসপি মিনা মাহমুদকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান ‘মামলাটি এখন পর্যন্ত তদন্তাধীন, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছুই বলতে পারছি না’।
সূত্র : মুক্তখরব ৯ আগস্ট (শেষ পৃষ্ঠা)