নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, রাজনীতির মাঠে ততই ব্যস্ততা বাড়ছে কামরানের

0
32093

32093

বিশেষ প্রতিনিধি: সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) জনপ্রতিনিধিদের মেয়াদ এখনো এক প্রায় বছরের চেয়ে কিছু বেশি। এরই মধ্যে গুঞ্জন চলছে, আগামী বছরের শুরুতেই হবে সিসিকের পরবর্তী নির্বাচন। তাই নির্বাচনের এক বছরও বাকি নেই। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, রাজনীতির মাঠে ততই ব্যস্ততা বাড়ছে সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও দলটির সিলেট মহানগর কমিটির সভাপতি কামরানের নির্বাচনকেন্দ্রিক ব্যস্ততা ছিল সবসময়ই। জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই তিনি চষে বেড়িয়েছেন পুরো সিলেট বিভাগ। এই মানুষটি সাধারণ জনগনের ডাকে সাড়া দিয়ে সব সময়ই ব্যস্ত দিন কাটায়।

এবার সিটি নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন তিনি। নির্বাচন সামনে রেখে নিজে যেমন বাড়িয়ে দিয়েছেন রাজনৈতিক ও সামাজিক তত্পরতা, তেমনি নেতা-কর্মীদেরও তাগিদ দিচ্ছেন মতানৈক্য ভুলে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে। দলে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও রাজনীতিতে অভিজ্ঞ কামরান মনে করেন, নির্বাচনে দল তাকেই মনোনয়ন দেবে। সিলেট পৌরসভার সর্বকনিষ্ঠ কমিশনার ছিলেন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। এরপর বাঘা বাঘা প্রার্থীদের পরাজিত করে পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। ২০০১ সালে পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত হয় সিলেট। প্রথম নির্বাচনে মেয়র পদে বিজয়ী হয়ে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখান কামরান। ওয়ান-ইলেভেনের সময় কারান্তরীণ অবস্থায় ভোট বিপ্লব ঘটিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সিটি মেয়রের চেয়ারে বসেন তিনি। তবে সর্বশেষ ২০১৩ সালের ১৫ জুন সিসিকের নির্বাচনে বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে পরাস্ত হন।

কামরানের ভাষ্যমতে, জনপ্রিয়তায় ধস নয়, ওই সময় দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণেই তিনি পরাজিত হয়েছিলেন। নির্বাচনে পরাজয় বরণ করলেও রাজনীতির মাঠে ঠিকই সক্রিয় অবস্থানে ছিলেন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। নিজের দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকা মহানগরী ছাড়িয়ে সিলেট জেলা ও বিভাগের বিভিন্ন স্থানে দলীয় কাজে সময় দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

গত উপজেলা নির্বাচন, পৌরসভা নির্বাচন ও ইউপি নির্বাচনে কামরান ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী গোটা সিলেট চষে বেড়িয়েছেন। ‘জনতার মেয়র’ কামরান ও ‘২৪ ঘণ্টার রাজনীতিবীদ’ শফিকুর রহমানকে পেয়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মীরাও দারুণ উৎফুল্লিত হন। দলের ঝিমিয়ে পড়া নেতা-কর্মীরাও ওইসময় চাঙ্গা হয়ে ওঠেন। এখন সিটি নির্বাচনকেই ধ্যান-জ্ঞান করে মাঠে রয়েছেন কামরান। নির্বাচনকে ঘিরে রাজনীতির মাঠে প্রতিনিয়তই ব্যস্ততা বাড়ছে তার। প্রতিদিনই মহানগরীর কোথাও না কোথাও দলীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন তিনি। ২৭টি ওয়ার্ডেই নিয়মিত ঢুঁ মারছেন। এসবের বাইরে সাধ্যমতো নগরীর গরিব ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন সিসিকের সাবেক এই মেয়র। এ ছাড়া দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত দেখা-সাক্ষাৎ, বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান, নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হওয়াসহ বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বিশেষ করে দেশ ও দলের জন্য নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। এখনো পর্যন্ত টানা তিনবার সিসিক নির্বাচনে লড়লেও কখনোই দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সৌভাগ্য হয়নি কামরানের। তবে বর্তমানে স্থানীয় নির্বাচনও দলীয় প্রতীকে হওয়ায় আগামী সিসিক নির্বাচনে প্রথমবারের মতো নৌকা প্রতীক পাওয়ার আশায় রয়েছেন কামরান।

যদিও তার সঙ্গে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ ও শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক, তিনবারের সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ। এদিকে কামরানের পক্ষে তার সমর্থক-শুভাকাঙ্ক্ষীরা নগরীতে প্রচার-প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। ‘সিসিকের নির্বাচনে আবারও কামরান ভাইকে চাই’, ‘কামরান ভাইকে আবারও মেয়র পদে দেখতে চাই’ এরকম নানা স্লোগান সংবলিত ব্যানার-পোস্টারও নগরীতে দেখা যাচ্ছে। সার্বিক বিষয়ে বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, ‘এই নগরী ও ন্রগরীর মানুষ নিয়েই আমার রাজনীতি। নগরীর মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে বারবার তাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। দলীয় সভানেত্রী চাইলে আগামী সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আমি আবারও প্রার্থী হব। আর স্বাধীনতার প্রতীক নৌকা নিয়ে নির্বাচন করতে পারলে সেটি হবে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। ’

কামরান আরও বলেন, ‘সিসিকের নির্বাচনকে ঘিরে দলীয় নেতা-কর্মীরা সক্রিয় হয়ে উঠছেন। তারা আমার কাছে আসছেন, পরামর্শ চাচ্ছেন। তাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা বলছি আমি। ’

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *