অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে দুই হাজার ৭৯৪ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ

0
rice

rice

অর্থবছরের শুরুতেই ব্যাপকহারে বাড়ছে কৃষি ঋণ বিতরণ। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) দুই হাজার ৭৯৪ কোটি ৫ লাখ টাকার কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে দেশের ব্যাংকগুলো। যা লক্ষ্যমাত্রার ১৩ দশমিক ৭০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকার কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে মোট বিতরণ হওয়া ঋণের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ৮০৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এছাড়া বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে এক হাজার ৯৮৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। কৃষিঋণ বিতরণে শীর্ষে রয়েছে সরকারি খাতের বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। আলোচ্য সময়ে বিশেষায়িত এ ব্যাংকটি ৪৮২ কোটি ৩৪ লাখ টাকার কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে। অর্থবছরের দুই মাসে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ১০ শতাংশ কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকটি। পুরো অর্থবছরের জন্য এ ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।

ঋণ বিতরণে এরপরেই রয়েছে বেসরকারি খাতের শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। দুই মাসে ব্যাংকটি ২৫৭ কোটি ২৮ লাখ টাকার কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে। যা সারা বছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি। পুরো অর্থবছরের জন্য ব্যাংকটির কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ২৩১ কোটি টাকা। কৃষিঋণ বিতরণে তৃতীয় অবস্থানে আছে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। অর্থবছরের দুই মাসে ব্যাংকটি ২৩৭ কোটি ৪০ লাখ টাকার কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে। যা লক্ষ্যমাত্রার ২০ দশমিক ৫২ শতাংশ। পুরো অর্থবছরের জন্য ব্যাংকটির কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে এক হাজার ১৫৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক প্রায় ১৩০ কোটি টাকার কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে। পুরো অর্থবছরের জন্য ব্যাংকটির লক্ষ্যমাত্রা এক হাজার ৬৮০ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন বিশ্লে­ষণ করে দেখা গেছে, বিতরণকৃত কৃষিঋণের অধিকাংশই শস্য খাতে বিতরণ করা হয়েছে। দুই মাসে শস্য খাতে এক হাজার ২৩৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। এছাড়া পোল্ট্রি খাতে ৫৬৫ কোটি টাকা, মত্স্য খাতে ৩৮২ কোটি টাকা, সেচ যন্ত্রাংশ খাতে প্রায় ১৮ কোটি টাকা, কৃষি যন্ত্রাংশে প্রায় ১৭ কোটি টাকা, খাদ্য ভাণ্ডার খাতে ১৫ কোটি টাকা, দারিদ্র্য বিমোচনে ১৫১ কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাতে ৪১০ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা এর আগের অর্থবছরের তুলনায় ১৬ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। তবে অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি ঋণ বিতরণ করেছিল ব্যাংকগুলো।

চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক নীতিমালায় কৃষিঋণ বিতরণের নতুন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এ বছর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বাইরে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক ২০ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ পল্ল­ী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) ৭২০ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করবে বলে নীতিমালায় উলে­খ করা হয়েছে। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, শস্য বা ফল চাষের জন্য সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত কৃষিঋণের ক্ষেত্রে সিআইবি প্রতিবেদন ও তদন্তের প্রয়োজন হবে না।

এদিকে ব্যাংকঋণের সুদহারের নিম্নমুখী প্রবণতা বিবেচনায় নিয়ে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত হিসেবে কৃষিঋণের সুদের হার কমানো হয়েছে। ১ জুলাই থেকে কৃষি ও পল­ী ঋণের সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগে এই ঋণের ঊর্ধ্বসীমা ছিল ১০ শতাংশ। ৯ শতাংশ সুদে এ ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলোকে উত্সাহ দিতে সাধারণ সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণের হার কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছর থেকে ১০০ টাকা কৃষিঋণ বিতরণের বিপরীতে মাত্র ২৫ পয়সা প্রভিশন রাখতে হবে। আগে ১০০ টাকা কৃষিঋণের বিপরীতে আড়াই টাকা সংরক্ষণ করতে হতো।

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, বেসরকারি অনেক ব্যাংক এখন কৃষিঋণ বিতরণ করছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলোও লক্ষ্যমাত্রার আলোকে ঋণ বিতরণ করছে। ফলে আগের চেয়ে কৃষিঋণ বিতরণের হার অনেক বেড়েছে। কৃষিঋণ বিতরণে দু-একটা অনিয়ম হলেও এই ঋণের গুণগত মান আগের চেয়ে বেড়েছে।

প্রসঙ্গত, কৃষিঋণ পুনঃতফসিল করতে বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। কোনো ডাউন পেমেন্ট ছাড়াই তাদের কৃষিঋণ পুনঃতফসিল করতে পারবেন। কোনো ধরনের জমা ছাড়াই নতুন ঋণ পাবেন। এছাড়া ঋণ পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ৬ মাস গ্রেস পিরিয়ড (কিস্তি আদায় বন্ধ) প্রদান করা যাবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *