কিংবদন্তি গায়ক এবং মুক্তিযোদ্ধা আজম খানের নবম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

0
images (7)

সারারাত জেগে যত কথা ভাবতেন সব কথা গুলোই গানের মাঝে রেখে গেছেন পপ গুরু আজম খান

আজ কিংবদন্তি গায়ক এবং মুক্তিযোদ্ধা আজম খানের নবম মৃত্যুবার্ষিকী, যিনি একটি নতুন ঘরানার পরিচয় দিয়ে দেশের সংগীতের দৃশ্যের রূপ নিয়েছিলেন এবং অগণিত অনুরাগী অনুগামী যারা অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁকে তাঁর পদক্ষেপে অনুসরণ করার জন্য ‘গুরু’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
আজম খান নামে খ্যাত মাহবুবুল হক খান ১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন।

বাংলা ব্যান্ড জগতের নিভে যাওয়া এক নক্ষত্রের নাম আজম খান। প্রচলিত আছে, তার মাধ্যমেই বাংলা সংগীত জগতে ব্যান্ড গানের যাত্রা শুরু। এ জন্য তাকে বাংলা ব্যান্ড সংগীতের গুরু বলা হতো। জীবদ্দশায় বেশ কিছু হিট গান উপহার দিয়ে গেছেন এই শিল্পী। তার ব্যতিক্রমী ঢঙের গায়কীতে মুগ্ধ হতেন দেশের ব্যান্ড সংগীতপ্রিয় মানুষ। দেশের গানেও কণ্ঠ দিয়েছিলেন পপগুরু।

১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তার জন্ম হয়েছিল ঢাকার আজিমপুরে। তবে ছয় বছর বয়স থেকে তিনি পরিবারের সঙ্গে কমলাপুর থাকতেন। দীর্ঘদিন ক্যান্সারে ভোগার পর ২০১১ সালের ৫ জুন ঢাকাস্থ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

আজম খানের কর্মজীবন শুরু মূলত ষাটের দশকের শুরুতে। ১৯৭১ সালে তার ব্যান্ড ‘উচ্চারণ’ দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। বন্ধু নিলু ও মনসুরকে গিটারে, সাদেক ড্রামে এবং নিজেকে প্রধান ভোকাল করে শুরু করেন সংগীত জীবন। ওই সময় বিটিভিতে তার গাওয়া ‘এতো সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে ‘ এবং ‘চার কালেমা সাক্ষী দেবে’ গান দুটি প্রচার হয়। দুটিই বেশ প্রশংসা পায়। ১৯৭৫ সালে দেশত্ববোধক ব্যান্ড গান ‘রেল লাইনের ওই বস্তিতে’ দিয়ে হৈ চৈ ফেলে দেন আজম খান।

১৯৯১-২০০০ সালে তিনি গোপীবাগ ফ্রেন্ডস ক্লাবের পক্ষ হয়ে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট খেলতেন। এছাড়া তিনি ‘গডফাদার’ নামে একটি বাংলা সিনেমায় ভিলেনের ভূমিকায় অভিনয় করেন। সেই ছবির নায়ক ছিলেন অ্যাকশন হিরো রুবেল। পাশাপাশি বেশ কিছু বিজ্ঞাপনচিত্রেও তিনি মডেল হিসেবে কাজ করেন।

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময়ে আজম খান পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তখন তিনি ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণের বিরুদ্ধে গণসঙ্গীত প্রচার করেন। ১৯৭১ সালে আজম খানের বাবা আফতাব উদ্দিন খান সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন। বাবার অণুপ্রেরণায় তিনি যুদ্ধে যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। ২১ বছর বয়সে তিনি যুদ্ধে যান।

আজম খানের গাওয়া গান প্রশিক্ষণ শিবিরে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণ যোগাতো। তিনি যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন ভারতের মেলাঘরের শিবিরে। এরপর তিনি কুমিল্লায় পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে সমুখ সমরে অংশ নেয়া শুরু করেন। কিছুদিন পর তিনি আবার আগরতলায় ফিরে আসেন।

এরপর তাকে পাঠানো হয় ঢাকায় গেরিলা যুদ্ধে। আজম খান ছিলেন দুই নম্বর সেক্টরের একটা সেকশনের ইনচার্জ। আজম খান মূলত যাত্রাবাড়ি-গুলশান এলাকার গেরিলা অপারেশনগুলো পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন।

সংগীতে বিশেষ অবদান রাখায় আজম খানকে মরনোত্তর একুশে পদক দেয় বাংলাদেশ সরকার। তার পক্ষে পদক গ্রহণ করেন শিল্পীর মেঝো ভাই প্রখ্যাত সুরকার আলম খান |
পপগুরুর পরিবেশনায় শেষ গান বাংলাদেশের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে প্রচারিত হয়।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *