কোথায় গেল স্বাস্থ্যের নথি?

0
BD-Pratidin_2021-11-02-09-

০২ নভেম্বর, ২০২১ ইং,
২৩ কার্তিক , ১৪২৮ বঙ্গাব্দ,
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নথি গায়েবের ঘটনায় সচিবালয়ের ছয় কর্মচারীকে গতকালও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এদিন সংস্থাটির ফরেনসিক ল্যাবে আঙুলের ছাপ ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি কারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এতগুলো নথি গায়েব করেছে বা এর সঙ্গে জড়িত। তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন যেহেতু সংশ্লিষ্ট কক্ষের দরজা ও লকারের কোনো তালা ভাঙা হয়নি তাই এ নথি গায়েবে অবশ্যই মন্ত্রণালয়ের লোকজন জড়িত।

এ ব্যাপারে সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান জানান, ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের টিম তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তাদের কাছে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তবে এখনো কাউকে আটক দেখানো হয়নি। তাদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

জানা গেছে, প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইস্যুর পর সাংবাদিকদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। বসানো হয়েছে সিসিটিভি। পাহারারত পুলিশ সদস্যরাও আগের তুলনায় বেশি তৎপর। এত কিছুর পরও গায়েব হলো সেই মন্ত্রণালয়ের নথি। তাই প্রশ্ন উঠেছে নথি গায়েব করল কারা? সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এর দায় এড়াতে পারেন কি? পুলিশসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সচিবালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) শাহাদৎ হোসাইনের কক্ষের লাগোয়া রুম থেকে নথিগুলো হারিয়ে যায়। শাহাদৎ হোসাইন সচিবালয়ের ৩ নম্বর ভবনের ২৯ নম্বর কক্ষে বসেন। লাগোয়া রুমটিতে বসেন ক্রয় ও সংগ্রহ শাখা-২-এর সাঁটমুদ্রাক্ষরিক ও কম্পিউটার অপারেটর মো. জোসেফ সরদার ও আয়েশা সিদ্দিকা। ফাইলগুলো এ দুই কর্মীর কেবিনেটে ছিল। জিডিতে বলা হয়েছে, ২৭ অক্টোবর অফিস করে নথিগুলো ফাইল কেবিনেটে রাখা হয়। পরদিন দুপুর ১২টায় কাজ করতে গিয়ে দেখা যায় ফাইলগুলো কেবিনেটে নেই। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী কথা বলতে রাজি হননি। এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সংবাদকর্মীদের দেখলেই সটকে পড়ছেন সংশ্লিষ্ট কক্ষের আশপাশের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। রবিবার এ বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলী নূর বলেন, ‘আমরা তো সত্যিকারভাবেই জানি না কে কাজটি করেছে। আমি তো মনে করি আমরা সবাই সন্দেহের মধ্যে আছি।’ এর পর থেকেই মূলত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এমনকি সিআইডি যে ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে তাদের ঘনিষ্ঠদেরও অনেককে বাঁকা চোখে দেখা হচ্ছে। যেহেতু বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে সেহেতু বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। কিন্তু এ নিয়ে কেউই মুখ খুলতে রাজি হচ্ছেন না। মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবের দফতরে যোগাযোগ করেও কোনো জবাব মেলেনি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেছেন, মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে চার সদস্যের কমিটি কাজ শুরু করেছে। তাদের প্রতিবেদন পাওয়ার পরই আসল ঘটনা জানা যাবে। ওই কমিটির প্রতিবেদন পাওয়া সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে মন্ত্রণালয়। সবাই সেই প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছেন। সিআইডি-সূত্র জানান, যে ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তাদের রবিবার দুপুরের পর সিআইডি কার্যালয়ে আনা হয়। প্রাথমিকভাবে সন্দেহভাজন স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের ছয় কর্মচারী হলেন মিনটু, জোসেফ, বাদল, বারী, ফয়সাল ও আয়েশা। তারা সবাই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। ২৮ অক্টোবর স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের উপসচিব নাদির হায়দার ১৭টি নথি গায়েব হওয়ার বিষয়ে শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এতে সচিবালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের একটি কক্ষ থেকে ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ নথি গায়েব হওয়ার তথ্য তুলে ধরা হয়। জিডির পরপরই সিআইডির ক্রাইম সিন ঘটনাস্থলে গিয়ে আলামত সংগ্রহ করে। শুক্র ও শনিবার মন্ত্রণালয় বন্ধ থাকায় রবিবার সিআইডির ক্রাইম সিনের সদস্যরা সন্দেহভাজন ১৩ কর্মকর্তা-কর্মচারীর আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করেন। আর আলমারিতে থাকা আঙুলের ছাপের সঙ্গে সন্দেহভাজনদের আঙুলের ছাপ মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। এজন্য সন্দেহভাজন কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিআইডি কার্যালয়ে রাখা হয়েছে।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *