জাতিসংঘে চিফ অব স্টাফ পদে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল।

বিশেষ প্রতিবেদন:
জাতিসংঘ সদর দফতরের অফিস অব মিলিটারি অ্যাফেয়ার্স, ডিপার্টমেন্ট অব পিস অপারেশনের (ডিপিও) চিফ অব স্টাফ হিসেবে মনোনীত হয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হক।
২১ মে শুক্রবার, আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে জাতিসংঘ সদর দফতরের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলসহ অন্যান্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদের ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ওই সাক্ষাতে তিনি জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি কন্টিনজেন্ট প্রেরণ এবং জাতিসংঘ সদর দফতরের বিভিন্ন উচ্চতর এবং গুরুত্বপূর্ণ পদে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে আরও অফিসার নিয়োগের ব্যাপারে অনুরোধ করেছিলেন। জাতিসংঘের সিনিয়র নেতৃত্ব এ ব্যাপারে ইতিবাচক প্রতিশ্রুতি দেন এবং এরই ফলশ্রুতিতে জাতিসংঘ সদর দফতরে গুরুত্বপূর্ণ এ পদে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদবীর একজন অফিসারকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
আইএসপিআর জানিয়েছে, এই পদটির জন্য এর আগে বাংলাদেশ থেকে কোনো কর্মকর্তা নিযুক্তির সুযোগ বা কোনো অনুরোধ আসেনি। সেনাবাহিনী প্রধানের অনুরোধের প্রেক্ষিতে এবার প্রথমবারের মত বাংলাদেশ এ সম্মান অর্জন করেছে। জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশগুলোর মনোনীত প্রার্থীদের মধ্য থেকে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এ পদে যোগ্য সামরিক কর্মকর্তাকে নির্বাচন করা হয়। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল প্রথম একজন বাংলাদেশি সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে জাতিসংঘ সদর দফতরে এমন উচ্চতর এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে নিয়োগ পাচ্ছেন।
সেনাবাহিনী প্রধানের যুক্তরাষ্ট্র সফরের পরপরই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন মালিতে (মিনুসমা) সেক্টর কমান্ডার পদে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদবির একজন কর্মকর্তা (ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঞ্জুর) নিয়োগ পান। এছাড়াও জাতিসংঘ সদর দফতরে মিলিটারি অ্যাডভাইজার এবং চিফ অব স্টাফ পদে নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হতে যোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়া হয়। পাশাপাশি জাতিসংঘে মিলিটারি অবজারভার এবং স্টাফ অফিসার হিসেবে ২০টি অতিরিক্ত নিয়োগ বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
এদিকে, সেনাবাহিনী প্রধানের যুক্তরাষ্ট্র সফরের মধ্য দিয়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের জন্য অভূতপূর্ব সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। সফরকালে তিনি সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে (সিএআর) বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের জনবল আরও বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাব রাখেন এবং তাদের মোতায়েনের কাজ চলমান রয়েছে।
ইতোমধ্যেই সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে বাংলাদেশ স্পেশাল ফোর্স কোম্পানি (ব্যানএসএফসি) এবং লাইট কুইক রিঅ্যাকশন ফোর্সের (এলকিউআরএফ) ৫০ জন জনবল বৃদ্ধিসহ ব্যানব্যাট-এর লেভেল-১ হাসপাতালকে লেভেল-২ হাসপাতালে উন্নীত করার ব্যাপারে চূড়ান্ত প্রস্তাব পাওয়া গেছে।
একই মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কুইক রিআ্যকশন ফোর্স (কিউআরএফ) এবং ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ার কোম্পানি মোতায়েনের সম্ভাবনাও রয়েছে। এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের সমন্বিত স্পেশাল ফোর্স সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে মোতায়েনের ব্যাপারে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব পেয়েছে।
সেনাপ্রধান জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন মালিতে একটি শক্তিশালী কুইক রিঅ্যাকশন ফোর্স এবং একটি এভিয়েশন ইউনিট মোতায়েনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যা শিগগিরই মোতায়েন করা হবে। ইতোমধ্যেই ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক (ডিআর) অব কঙ্গোতে ৬ সদস্যের অ্যারোমেডিক ইভাকুয়েশন টিম (এএমইটি) এবং ১৩ জন অতিরিক্ত মিলিটারি পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র সফরে সেনাবাহিনী প্রধান দীর্ঘমেয়াদি বকেয়া রিইমবার্সমেন্ট পরিশোধের ব্যাপারেও জাতিসংঘের সিনিয়র নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেন। এর ফলে সম্প্রতি উল্লেখযোগ্য অঙ্কের বকেয়া রিইমবার্সমেন্ট জাতিসংঘ কর্তৃক পরিশোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি মালিতে নিয়োজিত বাংলাদেশের চারটি কন্টিনজেন্ট রিস্ক প্রিমিয়াম পাচ্ছে।
সেনাবাহিনী প্রধানের ঐকান্তিক উদ্যোগের কারণেই প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ জাতিসংঘ মিশনে মোতায়নের পূর্বেই সকল শান্তিরক্ষীদের করোনার টিকা গ্রহণ নিশ্চিত করেছে এবং ইতোপূর্বেই যারা বিভিন্ন মিশনের মোতায়েন হয়েছেন তাদের জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে টিকা দেয়া হচ্ছে