দেশের কোনো অঞ্চলের মানুষ উপেক্ষিত থাকবে না : প্রধানমন্ত্রী

দিনবদল ডেক্স: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের কোনো অঞ্চলের মানুষ উপেক্ষিত থাকবে না। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে এনে সবার জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে।
বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। অনুষ্ঠানে ৩৫০ শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে বৃত্তি হিসেবে ২৫ হাজার টাকার চেক দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ১৬ কৃতী শিক্ষার্থীর হাতে বৃত্তির চেক তুলে দেন।
তিনি বলেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর যারা পিছিয়ে আছেন তাদের শিক্ষা-দীক্ষা এবং আর্থ-সামাজিকভাবে আরও উন্নত করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশের প্রায় ৫৫ জেলায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুব ক্ষুদ্র আকারে হলেও এসব জেলায় তারা রয়েছেন। কজেই তাদের জীবনমান কীভাবে উন্নত করা যায় সেই লক্ষ্যে কিছু বিশেষ এলাকা নিয়ে উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করি। এজন্য বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রাখার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী। প্রকল্প পরিচালক এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক কবির বিন আনোয়ার অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ওরাং সম্প্রদায়ের লিমা তাত্তো বৃত্তি লাভের পর অনুষ্ঠানে তার অনুভূতি ব্যক্ত করে।
অনুষ্ঠানে গত বছর বৃত্তি পাওয়া মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার চা শ্রমিক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধি এবং বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী রাজু দেশোয়ারার ওপর একটি ভিডিও চিত্র দেখানো হয়। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাঁওতাল, মুরং, হাজং, গারো, খাসিয়াসহ বহু ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী এদেশে রয়েছে। তাদের সংস্কৃতি শিক্ষা এবং মাতৃভাষার সম্মান বজায় রাখা আমাদের লক্ষ্য। তারা যেন শিক্ষার দিক থেকে পিছিয়ে না পড়ে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজ নিজ পেশা তারা করবেন কিন্তু একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে নিজ নিজ পেশায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেলে সমগ্র পেশারই উৎকর্ষ সাধিত হবে। আমরা যে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই, তা গড়তে হলে-অবশ্যই শিক্ষিত জাতি হিসেবে দেশের মানুষকে গড়ে তুলতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে দুই দশক ধরে যে সংঘাতময় পরিস্থিতি ছিল তা আওয়ামী লীগ সরকার দূর করে শান্তি চুক্তি করে। তাদের উন্নয়নে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় গড়ে তোলে, পার্বত্য উন্নয়ন পরিষদ করে দেয় এবং বহুবিধ উন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ২০১৭ সালে তার সরকার পাঁচটি নৃগোষ্ঠী ভাষায় ৭৭ লাখ ২৮২টি বই ছাপিয়ে বিতরণ করেছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি পাঠ্যপুস্তক বিতরণকালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ছেলে-মেয়েরা যাতে প্রথম শ্রেণিতে পড়ার জন্য নিজস্ব ভাষায় লিখিত বই পায় তার উদ্যোগ নেয়া হবে। এছাড়া যাদের বর্ণমালা নেই তাদের বাংলাতেই লেখনি আয়ত্ত করার পরামর্শও দেন প্রধানমন্ত্রী।
বৃত্তিপ্রাপ্তদের মনোযোগের সঙ্গে লেখাপড়া করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজেদের জীবনযাত্রা শিক্ষার মধ্য দিয়ে আরও উন্নত করার সুযোগ থাকে। সেদিকে দৃষ্টি দেয়াসহ ভালোভাবে লেখাপড়া করায় উৎসাহ প্রদানের জন্যই এই বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে।