বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক নির্মম নির্যাতনের শিকার

বিশেষ প্রতিবেদক : বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক মো: সাখাওয়াত হোসেন নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন। এই নির্যাতন তাকে কানাডা বা তার নিজ দেশ বাংলাদেশ ছাড়া যে কোন দেশ ভ্রমন কালেও বিদ্যমান থাকে। নির্যাতনে অত্যাধুনিক কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে বলে তিনি জানান। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মতে, কম্পিউটার হেডবেল্ট এর মাধ্যমে তার মাথায় থ্রট রিডিং ব্যবহার করা সহ অত্যাধুনিক প্রযু্িক্তর মাধ্যমে কানে ষড়যন্ত্রমূলক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। নির্যাতনে তার দাঁত, কোমড়ের হাড় ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারাত্বক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তিনি কানাডা ও বাংলাদেশে সুচিকিৎসা পাননি বলে জানিয়েছেন।
ঘটনাসূত্রে জানা যায় ২০০১ সালে আবেদনের ভিত্তিতে তিনি কানাডার মাইগ্রেশন নিয়ে তার চিকিৎসক স্ত্রী সহ টরেন্টো শহরে পাড়ি জমান। এবং সেই সময়ে সার্চ ভাইরাসের কারনে অর্থনৈতিক মন্দার কবলে ছিল কানাডা। তখন তিনি ফেডারেল গর্ভমেন্টের একটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরীতে যোগদান করেন এবং তার কিছুকাল পরে তিনি বুঝতে পারেন ২০০৩ সাল থেকে তিনি নির্যাতিত হচ্ছেন যখন বাংলাদেশে কেয়ারটেকার সরকার ছিল। কানাডার আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সহ সকল প্রকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথে তিনি যোগাযোগ করেও তিনি কোন প্রকার প্রতিকার পাননি।
আমাদের প্রতিবেদক বিষয়টি নিয়ে টরোন্টো পুলিশ ষ্টেশনে যোগাযোগ করলে, স্থানীয় পুলিশ স্টেশনের বরাত দিয়ে জানানো হয় রেকর্ড অনুযায়ী মো: সাখাওয়াত হোসেন কোন প্রকার অপরাধমূলক ও অপরাধের হস্তরেখার ছাপ পাওয়া যায়নি। এবং কানাডিয়ান ইন্টেলিজেন্ট সিকিউরিটি সার্ভিসের যোগাযোগ করলে জানা যায় উক্ত ব্যক্তি ধর্মীয় কোন উগ্রবাধী সংগঠনের সাথে জড়িত আছেন বলে তারা সন্দেহ করেন না। ‘‘CSIS’’ সহকারী পরিচালক R. Andrew Ellis জানান ‘‘I have reviewed your correspondence, and can assure you that CSIS is not involved in, nor responsible for, the events you have described.’’ |
তিনি বাংলাদেশের ছাত্রলীগের সাবেক ছাত্রনেতা ছিলেন এবং ৯০ সালের গণআন্দোলনে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত ছিলেন। দুই হাজার তিন সাল থেকে কানাডায় তিনি নির্মম নির্যাতনের স্বীকার হওয়ার পর অর্থনৈতিক, মানসিক ও শারীরিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন। এবং তার পরিবারের আগ্রহে তিনি ২০১১ সালে অসুস্থ অবস্থায় সুচিকিৎসা না পেয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।
বাংলাদেশে আসার পরেও তিনি একই ধরনের নির্মম নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন। তাকে রাবার বুলেট, ট্রেজার গান, লেজার গান সহ নানা ধরনের প্রযুক্তিগত নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়েছে। তার সমস্ত প্রকার যোগাযোগ মাধ্যম হ্যাকিং করা হয় যার কারণে তিনি কারও সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ করতে পারছেন না জানান। তিনি আরও বলেন আর্থিক ভাবে লাভবান হতে পারেন কোন প্রকার কাজ তাকে গত উনিশ বছর যাবত করতে দেওয়া হয়নি।
পরে তিনি বাধ্য হয়ে বাংলাদেশের মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক ড. মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করে বিস্তারিত জানালে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে যোগাযোগ করতে বলেন (মানবাধিকার কমিশনের ডায়েরী নং- ৩২৭ ৯/৭/১২)। যেহেতু বিষয়টি কানাডার ও বাংলাদেশে ঘটছে তাই তিনি বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে যোগাযোগ করতে বলেন। এবং সেই অনুযায়ী তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন। (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ডায়েরী নং- ২২৭১, তাং-১৯/০৩/২০১৫ইং।)
বিয়ষটি নিয়ে তিনি ঢাকা মেট্রেপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনারকে অবহিত করলে তিনি স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরী করতে বলেন। তার প্রেক্ষিতে তিনি মোহাম্মদপুর থানায় দুটি সাধারণ ডায়েরী করেন যার নম্বর- ৮৮৯ তাং ১২/১০/২০১৬ আরেকটি সাধারণ ডায়েরীর কপি তার বাসা থেকে চুরি হয়েছেন।
তিনি মোহাম্মদপুর থানায় ডায়েরীতে উল্লেখ করেছেন, ‘‘বিগত চার বছর যাতব প্রায়ই আমার বর্তমান ঠিকানায় বসবাসের ফ্লাট থেকে জরুরী কাগজপত্র,নগদ টাকা, কম্পিউটারের পেন ড্রাইভ, সিটিজেনশিপ কার্ড, ব্যাংকের ডেবিট কার্ড, ইলেকট্রিক ডিভাইস সহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র চুরি হয়েছে। এছাড়াও তিনি আরও উল্লেখ করেছেন তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে প্রায়ই আড়িপাতা হয়। যার কারনে তিনি অপর পান্ত থেকে কেউ ফোন করলে তার ফোনে ফোন আসে না। তিনি বিষয়টি একাধিকবার মোবাইল অপারেটর কোম্পানীকে অবগত করেছেন।’’
দ্বৈত নাগরিক হওয়ার কারনে তিনি এ্যামেনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল কানাডার সুপারিশমতে বাংলাদেশের কানাডিয়ান দুতাবাসে যোগাযোগ করেন এবং সকল ধরনের তথ্য-উপাত্ত প্রদান করেন। এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর কাছে তার নির্যাতনের বিষয়ে একটি চিঠি হস্তান্তর করেন। কিন্তু তাতেও কোন প্রকার অমানবিক নির্যাতন থেকে রেহাই পাননি। এই ধরনের অমানবিক কর্মকান্ডে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় এক সময় তার সহকর্মী, বুন্ধ বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজন সহ অনেকেই জড়িয়ে পড়েন বলে জানান তিনি। এমনকি তার পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে।
দীর্ঘ উনিশ বছর কানাডা ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান সহ এবং আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে এই নির্মম নির্যাতন বন্ধ করার জন্য আবেদনের প্রেক্ষিতে কোন কার্যকর ভুমিকা গ্রহণ করা হয়নি। এবং অপরাধী সনাক্ত করার ব্যাপারে কোন প্রকার যুগপোযোগী ভুমিকা পালন করা হয়নি বলে জানান তিনি।
আমাদের প্রতিবেদকের কাছে তিনি দু:খ প্রকাশ করে বলেন, আমি এক সময়ের সাবেক ছাত্রলীগের নেতা হওয়ার পরেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যাকে মাদার অব হিউমিনিটি বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে তিনি যাতে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দেখেন এবং এ ধরনের অমানবিক নির্যাতন বন্ধ করার কার্যকর ভূমিকা পালন করেন। তিনি আরও জানান তার জানা মতে এ ধরনের প্রযুক্তিগত নির্মম নির্যাতনের স্বীকার ছাত্রলীগের কোন ছাত্রনেতা কোন দিন হয়নি। তিনি কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর কাছে এবিষয়টি বিবেচনা করে দেখা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ জানান। আমরাও অচিরেই এ ধরনের অমানবিক নির্যাতন শীঘ্রই বন্ধ হবে বলে আশা করছি।