রাজিব এর চিকিৎসার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলের নগদ ৫ লক্ষ টাকা প্রদান

0
Atorni

Atorni
নগর প্রতিবেদক: গত মঙ্গলবার রাজীবের ঢাকার লালবাগের বাসায় গিয়ে রাজীব-রোমানার খোঁজখবর নেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি রাজীবের চিকিৎসার জন্য তাত্ক্ষণিক কিছু আর্থিক সহযোগিতা করেন এবং কিডনি প্রতিস্থাপনের সময় আরো আর্থিক সহায়তা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম প্রথমে ১ লক্ষ টাকা নগদ প্রদান করে ভারতে যাওয়ার আগে আরও ৪ লক্ষ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেয়ার কিছুক্ষণ পরে বাকী ৪ লক্ষ টাকাও নগদ প্রদান করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন টিটিসির প্রশিক্ষক গবেষক সাইদুর রহমান। এটর্নি জেনারেল মুন্সীগঞ্জ টঙ্গীবাড়ির সন্তান। তিনি সবসময় মানুষের কল্যাণে কাজ করেন। তিন রাজীবেরে বিষয়টি জানতে পেরে প্রথম থেকেই সহযোগিতা করে আসছেন বিভিন্নভাবে। রবিবার তিনি নগদ ৫ লক্ষ টাকা প্রদান করে নজীর স্থাপন করেছেন।
এদিকে রাজীব-রোমানার এ ঘটনা এরই মধ্যে নাড়া দিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, দেশের খ্যাতিমান আইনজীবীসহ সমাজের বৃত্তবানদের মাঝে। এর অংশ হিসেবেই গত বৃহস্পতিবার মুন্সীগঞ্জ-২ (লৌহজং-টঙ্গিবাড়ী) আসনের এমপি অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি রাজীবকে দেখতে গিয়েছিলেন তাঁর ঢাকার বাসায়।

এমিলির সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘মানবতা কখনো পরাজিত হতে পারে না। একটি মেয়ে যদি তাঁর জীবনকে বাজি রেখে অন্যের জীবন বাঁচাতে আসতে পারে, তবে আমরা কেন পারব না রাজীবের চিকিৎসার ব্যয়ভারের ব্যবস্থা করতে? অবশ্যই রাজীবের চিকিৎসা ব্যয়ভারের ব্যবস্থা করা হবে। যেভাবেই হোক আমরা রাজীবের চিকিৎসার ব্যবস্থা করব। ’

টঙ্গিবাড়ী উপজেলার চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার কাজী ওয়াহিদ রাজীবের চিকিৎসার জন্য এরই মধ্যে আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন। প্রয়োজনে তিনি আরো সাহায্য-সহযোগিতা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

জানা গেছে, সেই সময়ে ফেসবুকের কল্যাণে রাজীবের সঙ্গে পরিচয় হয় রোমানা তাসমিনের। ফেসবুকেই জানতে পারেন, কিডনি রোগী রাজীবের বাঁচার আশা প্রায় শেষ। জানতে পারেন রাজীবের রক্তের গ্রুপ। নিজের কিডনি রাজীবের সঙ্গে ম্যাচ করবে, ভাবতে শুরু করেন রোমানা। নিজেকে প্রশ্ন করেন, অপরের জীবন রক্ষার সুযোগই বা কয়জনের হয়? এই প্রশ্ন তাঁকে তাড়িয়ে বেড়ায়। একপর্যায়ে তিনি নিজের মাঝে রাজীবকে আবিষ্কার করেন। সিদ্ধান্ত নেন, প্রয়োজন হলে তিনি রাজীবকে বিয়ে করতে চান, তবু মানুষটি বেঁচে যাক।
din bodal 1
মানবিক প্রেমের এই অনিন্দ্য সুন্দর ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানী ঢাকায়, চলতি বছরের শুরুর দিকে। মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার বেজগাঁও ইউনিয়নের সুন্দিসার গ্রামে আনোয়ার হোসেন রাজীবের বাড়ি। আর রোমানা তাসমিনের বাড়ি জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামে। তাঁরা এখন থাকছেন ঢাকার লালবাগের একটি ভাড়া বাসায়। ২০১৭ সালের ১৩ জানুয়ারি রাজীবকে বিয়ে করেন রোমানা। কিন্তু যে প্রেম তাঁদের এক করেছে, রাজীবের জীবন রক্ষার সেই কাজটুকু শেষ হয়নি।

রোমানার মুখে এ কথা শুনে রাজীব পুনরায় বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতে শুরু করলেন। রাজীবের কাছে যেন এক অকল্পনীয় ব্যাপার। মহৎ হৃদয়ের তরুণী এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজের জীবনকেও ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছেন তো? এই প্রশ্নও রোমানাকে করলেন রাজীব। শেষ পর্যন্ত জয়ী হয় প্রেম। রোমানা পেশায় একজন প্যারামেডিক। কেরানীগঞ্জের সাজেদা হাসপাতালে তিনি বর্তমানে কর্মরত। তাঁর সামান্য আয়ে রাজীবের চিকিৎসা চলছে।
রোমানা কেন নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজীবকে বিয়ে করলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, রাজীবের সঙ্গে ফেসবুকের একটি গ্রুপে গত বছরখানেক আগে তাঁর বন্ধুত্ব হয়। ফেসবুকে রাজীবের কিডনি রোগের কথা প্রথম দিনেই জেনেছেন রাজীবের কাছ থেকে। আস্তে আস্তে তাঁর প্রতি মমতা বেড়ে যায়, আর তা এক সময়ে ভালোবাসায় রূপ নেয়। তাই সব কিছু জেনেও তিনি রাজীবকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন।

রাজীব স্ত্রী পেয়েছেন, কিডনি পাচ্ছেন। কিন্তু এত কিছুর পরও থমকে আছে রাজীবের কিডনি প্রতিস্থাপন। অর্থাভাবে রাজীবের কিডনি প্রতিস্থাপন করা যাচ্ছে না। এখন শুধু প্রয়োজন অর্থ, যা সবার সহযোগিতা ছাড়া সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। রাজীবের কিডনি প্রতিস্থাপন করতে প্রয়োজন প্রায় তিন লাখ টাকা। কিন্তু এর আগেই কিডনি চিকিৎসায় দেশে-বিদেশে অনেক টাকা খরচ করে ফেলায় রাজীবের পরিবারের পক্ষে এই টাকা জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রাজীবের চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসতে সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাজীবের ফেসবুক বন্ধুরা।

rajib and romana marrage

পারিবারিক সূত্র জানায়, আনোয়ার হোসেন রাজীব লৌহজং পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০২ সালে এসএসসি পাস করেন। ২০০৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এমএ শেষ করেছেন। তিনি পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালে সিনিয়র অফিসার হিসেবে চাকরি করতেন। তিনিই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন। বাবা নূর মোহাম্মদ একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে রাজীব ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি হন এবং প্রথম দিন থেকেই তাঁর ডায়ালিসিস শুরু হয়। পরে ভারতেও গিয়েছিলেন রাজীব। সেখানকার চিকিৎসকরা বলেছেন, কিডনি প্রতিস্থাপন করা ছাড়া তাঁর আর বাঁচার কোনো পথ নেই। ডা. বি চৌধুরীকেও দেখিয়েছেন রাজীব।

জানা গেছে, বর্তমানে তিনি ঢাকার লালবাগের চৌধুরী বাজার এলাকার ২১ নম্বর সুবল দাস রোডে বসবাস করছেন। আপনি ইচ্ছে করলে আপনার সহযোগীতার হাত রাজীব ও রোমানার জন্য বাড়িয়ে দিতে পারেন, তাহলে সমাজে এরকম আরও অসংখ্য রোমানা তৈরী হবে ।

তাঁকে সহযোগিতার জন্য রাজীবের ০১৭২২৭১৭০৬০ এই নম্বরে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *