সতর্ক সারাদেশ চলছে হাসপাতাল গড়ার কাজ

0
4695085_New Project

এ বি সাইদঃ চেনা পথঘাটগুলোও অচেনা হয়ে গিয়েছে ঢাকা শহরের। সন্ধ্যা ৭টার শাহবাগ মানে দম আটকে থাকা জ্যাম। মিরপুর রোড বা ওয়ারি– কোথাও নেই গাড়ির হর্ন, রিকসার টুংটাং– একটু বেপরোয়া বাইকারের চিৎকার। সব শুনশান, যেন কোন এক যাদুর কাঠির ছোঁয়ায় সবাই গভীর ঘুমে। শুধু মাঝে মাঝে আইনশৃংখলা কর্মী আর সংবাদমাধ্যমের গাড়ি, আছে জরুরি সেবাদানকারীদেরও উপস্থিতি। এর মাঝেই পুলিশের গাড়ি বা অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন। পথে থাকা হাতে গোনা মানুষেরও চমকে ওঠা। না। এই দৃশ্য শুধু ঢাকারই না। বিশ্বের আরও অনেক শহরের মতোই করোনাভাইরাস আতঙ্কে এই চেহারাই পেয়েছে রাজধানীর।

শুধু রাজধানীই নয়– বিভাগীয় শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত এই যুদ্ধাবস্থা। এর মাঝেই চলছে মাইকে সতর্কতা মেনে চলার প্রচার। জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল আর বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাস্ক, হ্যান্ডওয়াশ বিলি। বিভিন্ন বাজার বা ওষুধের দোকানে সামাজিক দূরত্বের লক্ষণরেখা টেনে বৃত্ত এঁকে দেওয়া। আছে কিছু মানুষের ব্যাক্তি চেষ্টায় শহর বা গ্রামের প্রান্তিক মানুষদের জন্য খাবার আর হাতধোয়া সাবান পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা। এমনই চেহারা গত কয়েক দিনের বাংলাদেশের। চিনের উহানে যে মূর্তিমান আতঙ্কের সঙ্গে মানুষের প্রথম দেখা, আজ গ্রহ জুড়ে সেই আতঙ্ক করোনাভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধে অঘোষিত লকডাউনে ঘরবন্দি নাগরিক। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া তাঁরাও আসতে চাইছেন না ঘরের বাইরে।

তারপরও পথে বেরোতে হচ্ছে– প্রয়োজনেই। সেই প্রয়োজন কারোর বাজার করার, কারোর শ্রম বেচে দিন শেষে পরিবারের সবার জন্য ভাতের বন্দোবস্তের। সরকারি ভাবেও চলছে সমাজের প্রান্তের মানুষের বিভিন্ন সহায়তা। প্রধানমন্ত্রী তাঁর টেলিভিশন ভাষণে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন খাবার নিয়ে না ভাবতে, পর্যাপ্ত খাবারের মজুদ রয়েছে বলে জানিয়েও দিয়েছেন।

এদিকে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির অবনতির ঘটলে বিপদ মোকাবিলায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় ঢাকায় ৩০১ শয্যার হাসপাতাল তৈরির কাজ করছে বাংলাদেশের দেশের শিল্পোদ্যোক্তা গোষ্ঠী– আকিজ গ্রুপ। ঢাকার তেজগাঁওতে আকিজের হাসপাতালটি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে– আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে হাসপাতালটিতে রোগীদের চিকিৎসা শুরু করা যাবে। সেখানে বিনামূল্যে চিকিৎসা পাওয়া যাবে বলে জানা গিয়েছে।

অঘোষিত লকডাউনে কমে গিয়েছে ঢাকায় বাতাসের দূষণ। যান চলাচল, কনস্ট্রাকশনের কাজ প্রায় বন্ধ, বন্ধ অধিকাংশ কলকারখানা–২২ মার্চে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বায়ুমান সূচক একিউআই-এর ইনডেক্সে ১৮ নম্বরে নেমে এসেছে ঢাকা। অথচ গত ছয় মাস ধরে বেশির ভাগ সময় প্রথম স্থান দখলে ছিল ঢাকার। সেই সূচক ৩৯১ পর্যন্ত উঠেছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, ৩০০-এর উপরে গেলে তাকে ‘দুর্যোগ পরিস্থিতি’ বলে। কিন্তু রবিবার সেই সূচক নেমে হয়েছে মাত্র ৮৫

করোনাভাইরাস রুখে নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটাচ্ছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশন। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া বিভাগের প্রধান মাসুদুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, “প্রথমে আমরা মিরপুরের টোলারবাগ ও হাতির ঝিলকে এই কার্যক্রমের আওতায় আনি। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায় এখন পুরো রাজধানীতে জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটানো হচ্ছে। ঢাকাকে জীবাণুমুক্ত করতে একেক দিন একেক এলাকায় এই কার্যক্রম চলবে।”

গত ২৫ মার্চ থেকে নগরবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে রমনা, তেজগাঁও, লালবাগ, ওয়ারি, মিরপুর, গুলশন, উত্তরা ও মতিঝিলসহ বিভিন্ন স্থানে দুই বেলা করে জীবাণুনাশক ওষুধ ছিটানো হচ্ছে নিয়মিত।

শহরবাসী যখন ঘরবন্দি এগিয়ে এসেছে অনেকগুলো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এর মাঝে দেশজুড়েই প্রশংসা পেয়েছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ পাঁচ লাখ শ্রমজীবী পরিবারের সদস্যদের কাছে খাবার পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ৫০০ টন চাল-ডাল-লবণ-তেল কেনার কাজ শুরু করেছে সংগঠনটি। একই সঙ্গে চিকিৎসা সমগ্রী, চিকিৎসদের পিপিই পৌঁছে দেয়ার চেষ্টাও তাদের রয়েছে। করোনাভাইরাস রুখতে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে জীবানুনাশক স্প্রে-র কাজটিও তাঁরাই শুরু করেছিলেন।

এদিকে ঢাকার রাস্তাঘাটে মানুষের উপস্থিত কম, সে কারণেই ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশ বা টিসিবি-র ট্রাকগুলিতে খুব একটা ভিড় দেখা যায়নি ক্রেতাদের। সকালে অল্প ক্রেতা চোখে পড়লেও দুপরের তেমন ক্রেতা চোখে পড়েনি। দুপুর ১টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে টিসিবি-র গাড়ি থাকলেও সেখানে কোনও ক্রেতার দেখা মেলেনি। অন্যদিকে, সচিবালয়ের সামনে টিসিবি ট্রাক থাকার কথা থাকলেও ট্রাকের দেখা পাওয়া যায়নি।

করোনা আপডেটের দিকে নজর দিলে দেখা যাচ্ছে, গত ২৪ ঘণ্টায় কেউ নতুন করে করেনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি। রবিবার ঢাকার মহাখালিতে আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, আজ পর্যন্ত মোট এক হাজার ৬৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা করা হয়েছে নতুন ৪২টি নমুনা। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামেও নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়েছে। সেখানেও গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে এই সময়ের মধ্যে নতুন করে কারও শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়নি। এখন বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৮ থেকে আর বাড়েনি। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত আরও চার জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ফলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মোট ৪৮ জনের মধ্যে ১৫ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন। মারা গেলেন ৫ জন।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *