সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী দপ্তর সচিবালয়কে ধূমপানমুক্ত করার উদ্যোগ

সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী দপ্তর সচিবালয়কে ধূমপানমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে সচিবালয়ের ভেতরে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার হার বাড়ানো হবে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর ও সংস্থাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আধা সরকারি পত্র দিয়েছেন স্বাস্থ্যসচিব সিরাজুল হক। ওই চিঠিতে আইন ও বিধি মেনে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা ও সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রচারের জন্য সব মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে তামাকের ব্যবহার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অধীনে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল (এনটিসিসি) কাজ করছে। কিন্তু যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় নির্দেশনার অভাবে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন বাস্তবায়িত হচ্ছে না। বিশেষ করে আইনে উল্লেখ করা জনসাধারণের ব্যবহৃত স্থানে (পাবলিক প্লেস) এবং আবাসিক হোটেলের লবি ও রেস্টুরেন্টে এ আইনের বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে না।
গ্লোবাল অ্যাডাল্টহুড টোব্যাকো সার্ভে ২০০৯ অনুসারে, বিশ্বে সর্বোচ্চ তামাকজাত পণ্য ব্যবহারকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশে ২৫ বছরের ওপরে জনসংখ্যার ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ তামাকজাত দ্রব্য (ধোঁয়ামুক্ত ও ধোঁয়াবিহীন) ব্যবহার করে। তামাক ব্যবহারের কারণে দেশে প্রতিবছর ৫৭ হাজার মানুষ মারা যায়। ৩ লাখ ৮২ হাজার পঙ্গুত্ব বরণ করে। ধূমপায়ী না হয়েও পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয় প্রায় ৪ কোটি ২০ লাখ মানুষ।
আইনে ‘পাবলিক প্লেস’ বলতে সম্মিলিতভাবে ব্যবহারযোগ্য বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার স্থান বা ভবনকে বোঝানো হয়েছে। এর মধ্যে আছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ, খেলার মাঠ, বিভিন্ন অফিস, বিপণিবিতান, বাজার, জনসমাবেশ, মেলা, বাসস্ট্যান্ড এবং বাসযাত্রীদের দাঁড়ানোর লাইন ও পাবলিক টয়লেট। আইনানুযায়ী এসব স্থানে ধূমপান বা তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের জন্য শাস্তি দেওয়া যাবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এ জন্য জরিমানা করতে পারবেন। যেকোনো ভুক্তভোগী নাগরিক এসব অপরাধের জন্য অভিযোগ করতে পারবেন। এ আইন বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে ‘পাবলিক প্লেসের’ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে ৫০০ টাকা জরিমানার বিধান আছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এ বিষয়ে বলেন, মেডিকেল কলেজেও ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন মানা হচ্ছে না। সরকারি অফিস-আদালত, থানা এবং হাসপাতাল থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে এই আইন লঙ্ঘন করা হচ্ছে। এ জন্যই আবারও উদ্যোগ নিয়ে আইন বাস্তবায়ন করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সহায়তা নেওয়া হয়েছে।
চলমান আইনে ধূমপানমুক্ত স্থানে ধূমপান করলে ৩০০ টাকা জরিমানার বিধান আছে। একাধিকবার এমন কাজ করলে পর্যায়ক্রমে দ্বিগুণ হারে জরিমানা করা যায়। আর পাবলিক প্লেসে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি না রাখলে তত্ত্বাবধায়ক বা নিয়ন্ত্রণকারী বা ব্যবস্থাপক আইনের বিধান লঙ্ঘন করলে অনধিক এক হাজার টাকা এবং একই কাজ বারবার করলে পর্যায়ক্রমে দ্বিগুণ হারে দণ্ড দেওয়া যাবে।