স্বপ্নের সেমিফাইনালে পৌঁছে গেলো বাংলাদেশ

0
eng20170610233858

eng20170610233858

অনেক প্রতীক্ষা, আশা-আশঙ্কার দোলাচলে দুলতে দুলতে অবশেষে স্বপ্নের সেমিফাইনালে পৌঁছে গেলো বাংলাদেশ। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে এই প্রথমবারেরমত আইসিসির সর্বোচ্চ পর্যায়ের কোনো টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল নিশ্চিত হলো বাংলাদেশের।

বার্মিংহ্যামের এজবাস্টনে আজ মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া। আজই প্রথম ইংল্যান্ডের সমর্থক পুরো বাংলাদেশ। কারণ, ইংলিশদের কাছে হারলেই অস্ট্রেলিয়ার বিদায় আর নিশ্চিত সেমিতে উঠে যাবে বাংলাদেশ। বৃষ্টি আইনে হোক আর যেভাবেই হোক, অবশেষে সেই স্বপ্ন পূরণ বাংলাদেশের।

ডিএল মেথডে ইংল্যান্ডের কাছে ৪০ রানে হেরে গেলো অস্ট্রেলিয়া। পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গে বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেলো স্টিভেন স্মিথদের। আর গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাশরাফিদেরও সেমিতে টেনে তুললো ইংল্যান্ড। ১১ বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ফিরেই সেমিতে টাইগাররা। সে সঙ্গে বিদায় করে দিলো গত বিশ্বকাপের দুই ফাইনালিস্টকে।

এক বুক স্বপ্ন, অনেক প্রত্যাশা আর হিসাব-নিকাশ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে বাতিল হওয়া এবং পয়েন্ট ভাগাভাগি করে নেয়ার পর থেকেই হিসাব-নিকাশ শুরু। নিউজিল্যান্ডকে হারতে হবে ইংল্যান্ডের কাছে, আবার নিউজিল্যান্ডকে হারাতে হবে বাংলাদেশকে এবং শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে হারতে হবে ইংল্যান্ডের কাছে।

যেন ছক কাটা ছিল। এর বাইরে যাওয়া যাবে না। গেলেই বিপদ। বাংলাদেশের সেমিতে যাওয়ার জন্য যে অংক, সেটিকেই সরলভাবে কষে গেলো নিয়তি। ইংল্যান্ডের কাছে পরাজিত নিউজিল্যান্ড। সাকিব-মাহমুদউল্লাহর অসাধারণ ব্যাটিংয়ে কিউইদের বিপক্ষে বাংলাদেশের দুর্দান্ত জয়। অবশেষে, ইংল্যান্ডের কাছে ডিএল মেথডে অস্ট্রেলিয়ার হার।

স্বপ্নের মতই ঘটে গেলো ঘটনাগুলো। সবগুলোই বাংলাদেশের অনুকুলে। নিয়তি এতটা সরলরেখায় হিসেব-নিকেশ করে বাংলাদেশকে সেমিফাইনালে পৌঁছে দিল, তা অবিশ্বাস্য। পারফরমেন্স যা করতে হয়েছে, শুধু নিউজিল্যান্ডকে হারানো। সেটাও এসেছে অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সে।

দারুণ নাটকীয়তায় পূর্ণ ছিল এই ম্যাচটিও। টস হেরে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং। মার্ক উড আর আদিল রশিদের গতি এবং ঘূর্ণিতে দিশেহারা হয়ে অস্ট্রেলিয়ার রান আড়াশ’র মধ্যে থেমে যাওয়ার জোগাড়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ট্রাভিস হেড নামক এক বাঁ-হাতি অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে থামাল ২৭৭ রানে।

২৭৮ রানে জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারাতে থাকে ইংল্যান্ড। ঠিক যেন আগের দিনের ম্যাচটির পুনরাবৃত্তি ঘটছিল। বাংলাদেশের যেমন ৩৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল, ফিরে গিয়েছিলেন চার সেরা ব্যাটসম্যান। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঠিক ৩৫ রানে ফিরে গিয়েছেন ইংল্যান্ডের ৩ জন সেরা সেরা ব্যাটসম্যান। অস্ট্রেলিয়ার ছুঁড়ে দেয়া ২৭৮ রানের জবাবে কী তাহলে ইংল্যান্ড জিততে পারবে না! টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতে হবে বাংলাদেশকে?

এমনই এক পরিস্থিতিতে এলো বৃষ্টি। খেলা হলো ততক্ষণে মাত্র ৬ ওভার। ৩ উইকেট হারিয়ে রান ৩৬। আধাঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকলো। এরপর আবার যখন খেলা শুরু হলো, তখনই ব্যাট হাতে জ্বলে উঠলেন ইংলিশ অধিনায়ক ইয়ন মরগ্যান আর বেন স্টোকস। ঠিক যেন সাকিব আল হাসান আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এই দুই ব্যাটসম্যান যেন দুর্দান্ত এক জুটি গড়ে তুলেছিলেন, নিউজিল্যান্ডের কোনো বোলারকে পাত্তা না দিয়ে, ঠিক তেমনি জুটি গড়লেন মরগ্যান এবং স্টোকস।

বৃষ্টির পর ঝড়ের গতিতে রান তুলতে থাকেন মরগ্যান এবং স্টোকস। তাদের মাথায় ছিল, ২০ ওভার হওয়ার পরও যদি বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়ে যায়, তখন যেন পরাজয় মেনে নিতে না হয়। যেন রান রেটে এগিয়ে থাকা যায়।

এই দুই ব্যাটসম্যানই ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। পাল্লা দিয়ে রান তুলছেন। দু’জন মিলে গড়েন ১৫৯ রানের জুটি। ৮১ বলে ৮৭ রান করে রান আউট হন ইয়ন মরগ্যান। এরপর জস বাটলারকে নিয়ে ৪৬ রানের জুটি গড়ে তোলের বেন স্টোকস। এরই মধ্যে ক্যারিয়ারে তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নিলেন স্টোকস। ১০৮ বলে পূরণ করেন সেঞ্চুরি। ১৩টি বাউন্ডারির সঙ্গে মারেন ২টি ছক্কার মারও।

ইংল্যান্ড জয় তখন একেবারে দ্বারপ্রান্তে। ৪০.২ ওভারে রান তখন ২৪০। এ সময় ইংলিশদের প্রয়োজন আর মাত্র ৩৮ রান। হাতে তখনও বল বাকি ৫৮টি। এ সময়ই নামলো বৃষ্টি। আবারও খেলা বন্ধ। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় খেলা বন্ধ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত আর খেলা মাঠে গড়ালো না। সেখানেই ইতি টানতে বাধ্য হলেন ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফট এবং বৃষ্টি আইনে ম্যাচটি ৪০ রানে জিতে গেলো ইংল্যান্ড।

নিয়মানুযায়ী ৪০ ওভারে ইংল্যান্ডের এই চার উইকেট হারিয়েই করতে হতো ২০০ রান। ইংল্যান্ড করেছে আরও ৪০ রান বেশি। বৃষ্টি আইন ডার্কওয়ার্থ-লুইস মেথডে এই ৪০ রানেই জয় পেলো ইংল্যান্ড।

ইংল্যান্ডের জয়ের সঙ্গে সঙ্গেই স্বপ্ন পূরণ হয়ে গেলো বাংলাদেশের। অস্ট্রেলিয়ার পরাজয় মানেই বাংলাদেশ উঠে যাবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে। অবশেষে সেটাই হলো। হেরে বিদায় নিল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। ‘এ’ গ্রুপ থেকে সেমিফাইনালে উঠে গেলো বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

অস্ট্রেলিয়া: ৫০ ওভারে ২৭৭/৯ (ওয়ার্নার ২১, ফিঞ্চ ৬৮, স্মিথ ৫৬, হেনরিকেস ১৭, হেড ৭১*, ম্যাক্সওয়েল ২০, ওয়েড ২, স্টার্ক ০, কামিন্স ৪, জ্যাম্পা ০, হেইজেলউড ১*; বল ০/৬১, উড ৪/৩৩, প্লানকেট ০/৪৯, স্টোকস ১/৬১, রশিদ ৪/৪১, মইন ০/২৪)।

ইংল্যান্ড: ৪০.২ ওভারে ২৪০/৪ (রয় ৪, হেলস ০, রুট ১৫, মর্গ্যান ৮৭, স্টোকস ১০২*, বাটলার ২৯*; স্টার্ক ১/৫২, হেইজেলউড ২/৫০, কামিন্স ০/৫৫, হেড ০/৯, হেনরিকেস ০/৬, জ্যাম্পা,০/৫২ ম্যাক্সওয়েল ০/১৪)।

ফল: ইংল্যান্ড ৪০ রানে জয়ী (ডিএল মেথডে)। ম্যাচ সেরা : বেন স্টোকস।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *