করোনা মোকাবেলায় বাড়ান দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা

দিনবদল স্বাস্থ্য ডেস্কঃ বিটা ক্যারোটিনযুক্ত খাদ্য গ্রহণ বাড়ায় মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ৷ গাজর, পাতাকপি, মিষ্টি আলু, আম, ব্রোকলি, পালংশাক ইত্যাদি বিটা ক্যারোটিনযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। বিটা ক্যারোটিন পরবর্তীতে দেহে সক্রিয় ভিটামিন-এ-তে রূপান্তরিত হয় যা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে। এটি দেহের দূষিত পদার্থগুলো ও জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অ্যান্টিবডিকে ভালোভাবে কাজ করতে সহায়তা করে।
ভিটামিন সি : এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে উন্নত করে। কোনো ইনফেকশনের সময় ভিটামিন-সি এর মাত্রা প্লাজমাতে হ্রাস পায়, কারণ দেহ ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়াই করার সময় ভিটামিন-সি ব্যবহার করে। এ কারণে সর্দি-কাশির সময় ভিটামিন-সি নিয়মিত খেতে বলা হয়। লেবু, কমলা, জাম্বুরা, আমলকী, পেয়ারা, কাঁচামরিচ, টমেটো, পেঁপে ইত্যাদি ভিটামিন-সি এর ভালো উৎস।
ভিটামিন-ডি-যুক্ত খাবার : মাছের তেল, ডিমের কসুম, পনির, মাশরুমে রয়েছে ভিটামিন-ডি। এটি রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী রাখে বলেই ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ারগুলোকে রুখতে সক্ষম। তাছাড়াও নিয়মিত সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দেহে কিছুটা রোদ লাগালে শরীরে ভিটামিন-ডি তৈরি হবে।
জিংকযুক্ত খাবার : জিংকের অভাব হলে বাচ্চাদের নিউমোনিয়া ও অন্যান্য সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। দুধ, মটরশুঁটি, লাল মাংস, বাদাম, সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদিতে জিংক রয়েছে।
ভিটামিন-বি৬-যুক্ত খাবার : শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় জৈব রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুরগি, টুনা মাছ, সবুজ শাকসবজি, ছোলা, ডাল ইত্যাদিতে ভিটামিন-বি৬ রয়েছে।
ভিটামিন-বি-যুক্ত খাবার : এটি খুবই শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা প্রতিরোধক কোষগুলোর স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যদি ডায়েটে ভিটামিন-বি পর্যাপ্ত না থাকে তাহলে টি কোষ এবং বি কোষগুলোর কার্যকলাপে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। কাঠবাদাম, ভুট্টার তেল, সূর্যমুখীর তেল, লেটুস, বাদাম ইত্যাদিতে ভিটামিন-বি পাওয়া যায়।
সেলিনিয়ামযুক্ত খাবার : শস্য, রসুন, ব্রোকলি, বাদাম, আখরোট ইত্যাদি সেলিনিয়ামযুক্ত খাবার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
খাদ্য তালিকায় উচ্চমানের প্রোটিন : যেমন- ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিডযুক্ত মাছ, মুরগি, ডিম ইত্যাদি যা দেহের জন্য খুবই প্রয়োজন।
প্রোবায়োটিকযুক্ত খাদ্য : যেমন দই খান। দইয়ে রয়েছে উপকারী ব্যাকটেরিয়া যা আমাদের পাকস্থলী ও খাদ্যনালির রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু থেকে রক্ষা করে। এজন্য দইকে প্রোবায়োটিক খাদ্য বলে। নিয়মিত দই খেলে শরীরের শ্বেতরক্তকণিকার পরিমাণ বাড়ে। টক দইয়ে ভিটামিন-ডি এবং ক্যালসিয়ামও রয়েছে। টকদইও খুব উপকারী। রসুন : রসুনে রয়েছে allicin নামক একটি যৌগ যা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এ যৌগটি তখনই তৈরি হয় যখন রসুন চিবিয়ে, থেতো করে বা কেটে খাওয়া হয়। দুটো রসুনের কোয়া গরম পানির সঙ্গে গ্রহণ করা যায় বা স্যুপ তৈরিতেও রসুন দেওয়া যেতে পারে।
দারচিনি : কিছু গবেষণায় দেখা গেছে এর anti viral বৈশিষ্ট্য আছে যা ভাইরাসের সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা গড়ে তুলতে পারে। কয়েকটি দারচিনি সারারাত ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে খাওয়া যায় বা লিকার চায়ের সঙ্গে এক চিমটি দারচিনি গুঁড়া মিশিয়ে পান করা যেতে পারে।
হলুদ : হলুদের মধ্যে আছে curcumin যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটিরি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যযুক্ত উপাদান। এর অ্যান্টি ভাইরাল ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য একদিকে ভাইরাস ও অন্যান্য জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা কমায়, তেমনি এর অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্যের জন্য শ্বাসনালির ইনফেকশন ও সর্দি- কাশির প্রকোপ কমাতে সক্ষম। দুধে/লিকার চায়ে হলুদ মিশিয়ে পান করা যেতে পারে।
মধু : মধুতে flavonoids এর মতো কিছু phenolic যৌগসহ আরও কিছু অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে। এর অ্যান্টি ভাইরাল ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যে আছে যা প্রদাহ কমাতে ও জীবাণুুর বিরুদ্ধে লড়তে সক্ষম। কালিজিরা : কালিজিরায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি সর্দি, গলা ব্যথা, জ্বর বিভিন্ন ক্ষেত্রে খবই উপকারী।
আদা : আদাতেও রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।
গ্রিন টি : epigallocatechin gallate নামক antioxidant এবং অনেক ফ্ল্যাভোনয়েডস যা প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
পানি ও পানীয় : পর্যাপ্ত পানি পান করুন। দৈনিক ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। তাছাড়া মুরগির স্যুপ, ডাবের পানি, চিনি ছাড়া ফলের রস, দুধ ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় রাখুন। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে আবার পানিশূন্যতাও দূর হবে।
তাই এসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে।