হোয়াটস অ্যাপে তরুণীকে অশালীন প্রস্তাব, ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ গ্রহণ

0
50210_india

50210_india

সোশ্যাল মিডিয়ার বাড়বাড়ন্তের এই যুগে কাউকে অপদস্থ করা কোনও কঠিন কাজ নয়। অধিকাংশ সময়ে মহিলারাই এই ধরনের অপমানের শিকার হন। মেয়েরা প্রায়শই বিষয়গুলিকে অগ্রাহ্য করা বা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। সেটাই অধিকাংশের কাছে সহজ সমাধান বলে মনে হয়। কিন্তু এই ধরনের সাইবার বালিইং-এর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কেরালার এক তরুণী যে পদক্ষেপ নিলেন, তা রীতিমতো দৃষ্টান্ত হয়ে থাকার যোগ্য।

কেরালার একটি শিক্ষা বিষয়ক সংগঠনের সিইও শ্রীলক্ষ্ণী সতীশ। মাস খানেক আগে হঠাতই হোয়াটস অ্যাপে তাঁর কাছে অভব্য সব মেসেজ আসা শুরু হয়। ‘তোমার রেট কতো?’, ‘কী ভাবে তোমার সঙ্গে দেখা হতে পারে?’, ‘আমি তোমার জন্য হোটেলে ঘর বুক করব?’— অজানা নম্বর থেকে শ্রীলক্ষ্মীর ফোনে আসতে থাকে এমনই সব মেসেজ। বিস্মিত এবং অপমানিত হলেও সব কিছু মুখ বুজে সহ্য করার মেয়ে শ্রীলক্ষ্মী নন। তিনি পাল্টা ফোন করেন মেসেজ প্রেরণকারী একটি নম্বরে। যে পুরুষ ফোনটি ধরেছিলেন, তাঁকে নিজের প্রকৃত পরিচয় দেন শ্রীলক্ষ্মী এবং ফেসবুকে নিজের আসল প্রোফাইলটিরও হদিশ দেন। সেই পুরুষ নিজের ভুল বুঝতে পেরে আন্তরিক ভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন শ্রীলক্ষ্মীর কাছে। শ্রীলক্ষ্মী জানতে চান, তাঁকে হঠাৎ এমন মেসেজ পাঠানোর কথা মনে হল কেন ওই ভদ্রলোকের, তাঁর নম্বরই বা তিনি পেলেন কোত্থেকে? ওই পুরুষই তখন ফাঁস করে দেন রহস্য।

জানা যায়, নিজের এক বন্ধুর কাছেই শ্রীলক্ষ্মীর নম্বর পেয়েছিলেন তিনি। ওই বন্ধুই নাকি শ্রীলক্ষ্মীকে ‘সুপার আইটেম’ বলে উল্লেখ করেছিলেন হোয়াটস অ্যাপে। নিজেদের সেই হোয়াটস অ্যাপ কনভারসেশনের স্ক্রিন শট-ও পাঠান তিনি প্রমাণ হিসেবে। শ্রীলক্ষ্মী বুঝতে পারেন, তাঁর পরিচিত এক পুরুষই অবাঞ্ছিত ভাবে তাঁর নম্বর ছড়িয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। ছেলেটি আবার একটি ন্যাশনাল পার্টির সদস্যও, এবং বাস্তবে সেই ছেলে শ্রীলক্ষ্ণীকে ‘দিদি’ বলে সম্বোধন করে। কিন্তু সেই যুবকের রাজনৈতিক পরিচয়কে গুরুত্ব দেননি শ্রীলক্ষ্মী। তিনি সোজা থানায় এফআইআর করেন ওই যুবকের নামে।

তার পরেই নড়েচড়ে বসেন ওই রাজনৈতিক দলের অন্যান্য স্থানীয় সদস্যরা। তাঁরা শ্রীলক্ষ্মীকে অনুরোধ করেন, পুলিশে করা অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য। কিন্তু তাতে তরুণীর মন গলেনি। তখন ওই যুবকের বাবা শ্রীলক্ষ্মীকে ২৫ হাজার টাকার একটি চেক দেওয়ার চেষ্টা করেন।
বলেন, টাকাটা নিয়ে তিনি যেন কেস উইথড্র করে নেন। শ্রীলক্ষ্মী জানান, কেস তিনি তুলে নিতে পারেন। কিন্তু টাকাটা তিনি নেবেন না। বরং যুবকের বাবাকে টাকাটা কোনও স্বেচ্ছাসেবী সঙ্গগঠনকে দিয়ে রসিদ নিয়ে এসে দেখাতে হবে। বিপাকে পড়া ভদ্রলোক তেমনটাই করেন।

সেই রসিদের ছবি নিজের ফেসবুক পেজে পোস্ট করেন শ্রীলক্ষ্মী। বিবৃত করেন গোটা ঘটনাটাও। তার পরেই শুভেচ্ছা বার্তায় ভেসে যায় শ্রীলক্ষ্মীর ফেসবুক ওয়াল। সবাই শ্রীলক্ষ্মীকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাতে থাকেন তাঁর ব্যতিক্রমী ও সাহসী পদক্ষেপের জন্য।

সত্যিই কুর্নিশ জানানোর মতো কাজ করেছেন শ্রীলক্ষ্মী। তাঁর সিদ্ধান্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় অবমানিত আরও বহু মেয়ের কাছে অনুসরণযোগ্য হয়ে রইল।
সূত্র: এবেলা

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *