১৮-২০ বছরের ২০০ তরুণীকে অনৈতিক কাজে বাধ্য করেন রাজ।

০৭ আগস্ট শনিবার, ২০২১ইং,
২৩ শ্রাবণ ১৪২৮ বঙ্গাব্দ।
বিশেষ প্রতিনিধি:
দুই শতাধিক তরুণীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেছেন আলোচিত চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ। সিনেমা ও মডেলিংয়ে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে তরুণীদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়াতেন। প্রথমে ফাঁদ পেতে তার নিজের বাসায় ‘রাজ মাল্টিমিডিয়া’য় নিয়ে অনৈতিক কাজে বাধ্য করাতেন। এসব তরুণীর বেশিরভাগের বয়স ছিল ১৮ থেকে ২০ এর মধ্যে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে এ নিয়ে স্বীকারোক্তিও দিয়েছেন রাজ। তার বনানীর বাড়িতে অভিযানেও কম্পিউটার ও মোবাইলে মিলেছে অনেক অনৈতিক গোপন ভিডিও-ছবি। এছাড়াও জব্দ করা হয়েছে তিনটি মেমরি কার্ড।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে নজরুল ইসলাম রাজ দাবি করেন, কমবয়সী তরুণীদের মধ্যে মিডিয়া সেলিব্রেটি হওয়ার শখ বেশি থাকে। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি তরুণীদের সঙ্গে অনৈতিক কাজ করতেন। আবার অনেক সময় ব্ল্যাকমেইলিংয়ের জন্য গোপনে ভিডিও ধারণ করে রাখতেন। এ জন্য তিনি বনানীতে অবস্থিত তার বাসাকে বেশি কাজে লাগাতেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একধিক সূত্র জানায়, রাজের বনানীর বাসাতে পর্নোগ্রাফি তৈরি কনটেন্ট পাওয়া গেছে। বিশেষ করে তার প্রডাক্শন হাউজের মাধ্যমে যারা মডেল বা অভিনেত্রী হতে ইচ্ছা প্রকাশ করতেন, তাদের সঙ্গে রাজ কোনো না কোনোভাবে শারীরিক সম্পর্ক করতেন। তাদের অনেককে তিনি বাধ্য করতেন। আবার স্বেচ্ছায়ও অনেকে তার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়াতেন। এসব কাজের দৃশ্য গোপনে ভিডিও করে রাখতেন তিনি।
রাজ বিনোদনজগতে বিচরণ করেন ২০১৪ সালে। এরপর তার সঙ্গে পরিচয় হয় পরীমনির। রাজের হাত ধরেই পরীমনি মাদক সেবনে জড়িয়ে পড়েন। ‘রাজ মাল্টিমিডিয়া’র কর্ণধার নজরুল ইসলাম রাজ শোবিজজগতে ক্যারিয়ার শুরুর পর নাটক ও সিনেমা প্রযোজনা শুরু করেন। তার রাজ মাল্টিমিডিয়ার অফিসকে তিনি অনৈতিক কার্যক্রমে ব্যবহার করতেন। অভিযানে সে রকম অনেকগুলো পর্নোগ্রাফির কনটেন্ট জব্দ করেছে এলিট ফোর্স র্যাব।
১৯৮৯ সালে খুলনার একটি মাদরাসা থেকে দাখিল পাসের পর গ্র্যাজুয়েশন করতে ঢাকায় আসেন রাজ। এরপর তিনি বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য ও ঠিকাদারি কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি শোবিজজগতে বিভিন্ন সিনেমা ও নাটকে তিনি নানা চরিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি নামে-বেনামে প্রযোজনায় যুক্ত হন। রাজ মাল্টিমিডিয়া নামে তার একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার পর, ব্যবসায়িক জগৎ ও চিত্রজগতের দুই ক্ষেত্রে তার সংযোগ থাকায় অতিরিক্ত অর্থলাভের আশায় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে নিজ অবস্থানের অপব্যবহার করেন।
নজরুল ইসলাম রাজ , শরিফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান ও মাসুদুল ইসলাম জিসানের সহযোগিতায় ১০ থেকে ১২ জনের একটি সিন্ডিকেট ছিল তাদের। যেই সিন্ডিকেটটি রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায়, বিশেষ করে গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় পার্টি বা ডিজে পার্টির নামে মাদক সেবনসহ নানান অনৈতিক কর্মকা-ের ব্যবস্থা করতেন। পার্টিতে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে সিন্ডিকেট সদস্যরা বিপুল পরিমাণ অর্থ পেতেন। অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত উচ্চবিত্ত অভিজাত পরিবারের সদস্য ছিলেন। প্রতিটি পার্টিতে ১৫ থেকে ২০ জন অংশগ্রহণ করতেন। এছাড়া সিন্ডিকেটটি বিদেশেও ‘প্লেজার ট্রিপের’ আয়োজন করত। এদিকে রাজচক্রের ডিজে পার্টিতে বেশ কয়েকজন মডেলের নাম পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের তালিকাও যাচাইবাছাই করা হচ্ছে।